×

জাতীয়

আগামী বছর আসবে ইউরেনিয়াম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৭:১১ পিএম

আগামী বছর আসবে ইউরেনিয়াম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান

শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

স্বপ্ন পূরণের পথে আরো একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল আজ স্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের উদ্বোধন করবেন। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম দেশে এসে পৌঁছবে। ডিসেম্বর থেকে প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এই প্রকল্পের কাজ সিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।

মঙ্গলবার ( ১৮ অক্টোবর ) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী ইয়াফেজ ওসমান বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রিঅ্যাক্টর স্থাপনের উদ্বোধন করবেন। গত বছর প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর স্থাপন হয়। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। দুটি ইউনিটেই রিয়েক্ট প্রেশার ভেসেল স্থাপন করা প্রকল্পের অনেক বড় অগ্রগতি।

মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ২০২৪ সালে প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ কতটুকু এগিয়েছে তা গতানুগতিকভাবে হিসাব করে বলা যায় না। কারণ অনেক কাজ আছে।আমরা দুইভাবে কাজের হিসাব করি। একটি হচ্ছে ফিন্যান্সশিয়াল, আরেকটি হচ্ছে ফিজিক্যাল। ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কাজ শেষ হওয়ার পর রিপোর্ট দিতে হয়। সেই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমরা পেমেন্ট করতে পারি না। যার মধ্যে অনেক কাজ ফিজিক্যালি শেষ হওয়ার পরেও হিসাবের মধ্যে আনতে পারিনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রথম ইউনিটের ভৌত অবকাঠামগত কাজ সত্তর শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিট মিলিয়ে ধরলে প্রায় ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ সরকার শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করছে। আমার জানা মতে সময়মতো কাজ শেষ করতে পারবো ইনশাল্লাহ। এই ধরনের প্রকল্প নিয়ে খুব বেশি কিছু বলা যায় না। কারণ এখানে অনেক ধরনের নিরাপত্তাজনিত ইস্যু আছে।

সঞ্চালন সমস্যার কারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গেড়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী ইয়াফেজ ওসমান বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে অন্যদের বিষয়গুলো আমি বলতে পারব না। একটা কথা বলে রাখি, আমি তৈরি হলেই তো হবে না। আমি তো বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে বিক্রি করবো। কিন্তু যারা কিনবে তাদের কি প্রস্তুতি আছে তা তো আমি বলতে পারবো না।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছি। বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনার পর তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্বচ্ছতার মাধ্যমে। যেসব দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে কিন্তু এখনো আগাতে পারেনি তারাও আমাদের অগ্রগতি দেখে হতভাগ। কয়েকদিন আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট একটি সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক দেশ আমার কাছে আমাদের পারমাণবিক অগ্রগতি নিয়ে জানতে চেয়েছে। অগ্রগতির বিষয় বলার পর এসব দেশ হতবাক হয়ে গেছে। একটি দেশ আমাদের পিজি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দেশে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ তারা জানে পারমাণবিক টেকনোলজির সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এই জনশক্তি নিয়ে তারা কাজ করতে চায়। প্রকল্প পরিচালক সাহেব তাদের বলেছেন,আগে আমাদের কাজ শেষ হোক তারপরে দেখা যাবে।

প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বন্ধে মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা দফার দফায় প্রকল্প এলাকায় এসে আমাদের কাজ দেখেছেন। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেছেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবকিছু দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর রাসেল স্থাপনের উদ্বোধনের পর নির্মাণ কাজ শুরু করবো। নির্মাণ কাজ শেষে স্টার্টআপ করা হবে। তারপর কমিশনিং শুরু করবো। এরপর আমরা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করবো। কমিশনিংয়ের কাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর গ্রিডে যাবে ২০২৪ সালে। দ্বিতীয় ইউনিট গ্রিডে যাবে ২০২৫ সালে। প্রকল্পের কাজে কোন চ্যালেঞ্জ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, আমাদের কোথাও কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। আমরা সিডিউল অনুযায়ী করোনার মধ্যেও যেমন কাজ করেছি, তেমনি এখনো করছি।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের রেডিয়েশনের প্রভাবে প্রকল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের ওপর স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যার বিষয়টি কিভাবে দেখা হচ্ছে-এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। আমি সবাইকে নিশ্চিত করে বলতে চাই এখানে কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।প্রকল্প এলাকার ৩০০ মিটারের পর রেডিয়েশন যাবে না। জনগণ নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবে। প্রকল্পের ২০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে রেডিয়েশন মনিটরিং করার জন্য ২৩ টি মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হবে।

আজকের রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের নির্মাণ সংস্থা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার(আইএইএ) প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এই রিঅ্যাক্টর স্থাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে ‌।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে রিঅ্যাক্টর ভেসেল স্থাপন। রিঅ্যাক্টর ভেসেলকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলা হয়। ইতিমধ্যেই রিঅ্যাক্টর ভবনের বিভিন্ন স্তরের অবকাঠামসহ সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলো প্রস্তুত করা হয়েছে ‌। এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ রিঅ্যাক্টর স্থাপন হলে রূপপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটেরও মাইলফলক অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের রিয়াক্টরের ভেসেল স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক ও প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে স্থাপন করা হচ্ছে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি থ্রি জি(প্লাস) ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রিঅ্যাক্টর। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) প্রকৌশল শাখা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে । রোসাটমের জেএসসি এইএম টেকনোলোজির ভল্গোদনস্ক শাখার এটোমম্যাস প্লান্টে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টরসহ ভারি সরঞ্জামগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৩৩ দশমিক ৬ টন ওজনের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর ভেসেল প্রস্তুত করতে ২ বছরের বেশি সময় লাগে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App