×

জাতীয়

ভোক্তার গণশুনানিতে গণঅসন্তোষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৯ এএম

ভোক্তার গণশুনানিতে গণঅসন্তোষ

ছবি: সংগৃহীত

গ্যাসের বিলসহ নানা বিষয় নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের গণশুনানিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। এ সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এদিকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করার তাগিদ দেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

গণশুনানিতে বাণিজ্য সচিব বলেন, ভোক্তা অধিকার আইনে ৩ ধরনের ব্যবস্থা আছে। বাজার অভিযানে জরিমানার সঙ্গে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলাও করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মহাপরিচালকের অনুমোদন লাগবে। তাই হয়তো করা হয় না। কিন্তু আমার আজকের বক্তব্য স্পষ্ট, বড় বড় অপরাধে ফোজদারি মামলা করতে হবে। গতকাল রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ নির্দেশ দেন।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে টিসিবি ভবন মিলনায়তনে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।

বাণিজ্য সচিব বলেন, নকল ও ভেজাল দেয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ আইন আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আইন আছে। ভোক্তা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একদিকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে আবার জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অফিসেও অভিযোগের শুনানি করা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে শাস্তিরও ব্যবস্থা হচ্ছে।

বক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিনিয়র সচিব বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ শুধু অভিযান করে সব করা যাবে না। দেশে খাদ্যের মান দেখার জন্য বিএসটিআই আছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ অনেকটা কমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, নিজ নিজ জায়গায় সবাই কাজ করলে ভোক্তা আইন এক সময় লাগবে না। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন লাগবে। কারণ দেশের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা থাকবে না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকবে। তাই তাদের অসম প্রতিযোগিতায় দেখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন থাকতে হবে। জীবন বাঁচানোর ফি এত বেশি কেন? দফায় দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায় কার? ভোক্তা অধিকারের গণশুনানিতে এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে তারা গ্যাসের বিল নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাসের কাছ থেকে গ্যাস কিনে বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।

গণশুনানিতে এক ভোক্তা বলেন, ‘আমরা ৬০ ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার কথা, সেখানে আমরা ২৫ থেকে ৩০ ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। কিন্তু আমি ঠিকই ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দিচ্ছি। কিন্তু শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য আমরা ডিমান্ড চার্জ দিচ্ছি। কিন্তু আমি তো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন করার পক্ষেও গণশুনানিতে যুক্তি তুলে ধরা হয়। এ সময়ে প্রশ্ন ওঠে, দাম নির্ধারণের দায়িত্ব কার আর কতটুকু যৌক্তিকভাবে তা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেজালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও আমরা ভেজাল দিচ্ছি। খোলা তেলে ভেজাল দিয়ে বেশি দাম নিচ্ছি। এ থেকে মুক্তি চাই। পৃথিবীতে কোথাও খোলা তেল নেই।

তাই আমাদেরও খোলা তেল বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। অন্যের পণ্য এনে ব্যবসা করা যাবে না। ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে গিয়ে ভোক্তা আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল করতে কিছু নিত্যপণ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। তেল, চিনির দাম সরকার বেঁধে দিয়েছে। তবে সব জায়গায় ধরা ঠিক না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে নীতি-নৈতিকতার মধ্যে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আইন করলেও অনেকে নিজেই মানে না। এনবিআর কাউকে অহেতুক ২০০ শতাংশ জরিমানা করলে এটা ভোক্তাদের ঘাড়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সবাইকে সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এমন কোনো কাজ করা ঠিক হবে না যাতে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। কারণ ইচ্ছা করলেই জোর করে আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। তবে গত ছয় থেকে আট মাসে তাদের ভেতরে ঢুকেছি, তাদের অনিয়ম ধরা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ধরা হচ্ছে। গ্যাস না থাকায় তিতাস গ্যাসকেও নোটিস করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, গুলশান, বনানীর বিভিন্ন শোরুমে আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা ছাড়া গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন কসমেটিক পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানে তা পাওয়া যাচ্ছে। এত বেশি পণ্য লাগেজে আসে না। এগুলো নকল। তাই আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও এমআরপি ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি করা যাবে না। আমরা নিজে মামলা না করলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডিসহ প্রতিযোগিতা কমিশন মামলা করেছে। ২০০৯ সালের ভোক্তা আইনের একটা জায়গা পরিষ্কার না। তাই এ ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে। আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App