×

জাতীয়

ওয়াসার এমডির দুর্নীতির নথিপত্র চেয়ে ৭ প্রতিষ্ঠানে চিঠি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:১৮ পিএম

ওয়াসার এমডির দুর্নীতির নথিপত্র চেয়ে ৭ প্রতিষ্ঠানে চিঠি

ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই অংশ হিসেবে ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট এবং প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সাত প্রতিষ্ঠানের কাছে নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংবিধিবদ্ধ সংস্থাটি। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব রেকর্ডপত্র সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর করা পৃথক চিঠিতে নথিপত্র তলব করা হয়েছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার এমডি বরাবর পাঠানো চিঠিতে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পিপিআই সংক্রান্ত যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে। আরব বাংলাদেশের (এবি) ব্যাংক লিমিটেডের কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে কারওয়ান বাজার শাখায় ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের বিজয় নগর শাখার ম্যানেজার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ওয়াসার অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠানো চিঠিতে তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম, কেওআইসি, সিগনেচার কার্ড হিসাব খোলা ও পরিচালনা সংক্রান্ত সমিতির সব রেজ্যুলেশন। ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্টের নামে ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিচালিত ব্যাংক হিসাব।

এদিকে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র, আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র আর্থিক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা চেয়েছে দুদক। এছাড়াও সমিতির বর্তমান ও পূর্ববর্তী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী কমিটির সব সদস্যের নাম, পদবি (দাপ্তরিক ও সমিতির) বর্তমান কর্মস্থল, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে। একই চিঠিতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিপিআই প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্স সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমিতির আয় ব্যয়ের হিসাব ও ব্যাংক ব্যালেন্সসংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রের কপি চাওয়া হয়েছে।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। বিতর্কিত তাকসিম এ খানের পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, ঠিকাদার নিয়োগে সিন্ডিকেট, ঘুষ লেনদেন, পদ সৃষ্টি করে পছন্দের লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, অপছন্দের লোককে ওএসডি করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে। গত ৯ জুন ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদতে ও নির্দেশে অপর আসামিরা টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন এমন অভিযোগ তাকসিম এ খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়। ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় অন্য যাদের আসামি করা হয়েছিল তারা হলেন, ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম শ্যামল বিশ্বাস, উপসচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ ও উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান।

আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে আদেশে উল্লেখ করেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কর্তৃক কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হলে তা দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউলভুক্ত অপরাধ। এক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ মামলা করতে পারেন না এবং এমন মামলা নেয়ার এখতিয়ার আদালতের নেই। তাই বাদীর দরখাস্তটি ফেরত দেয়া হলো। ওই মামলার তদন্তভার-ই দুদকের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৫ আগস্ট প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App