×

শিক্ষা

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৪ এএম

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

মেহেরপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান নিয়ে পত্র চালাচালি যুদ্ধে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কাছে হেরে গেছে জেলা শিক্ষা বিভাগ। ১৪ কোটি টাকার আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পত্র চালাচালি হয়েছে সরকারের দুটি বিভাগের মধ্যে। জেলা শিক্ষা বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মেহেরপুরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার ১.৫ শতাংশ হিসাবে ২৪৩ জন। তবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এ পরিসংখ্যান মেনে নিতে পারেনি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো নিজস্ব লোকবল দিয়ে পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখেছে জেলায় ঝরে পড়েছে ৮১২৮ জন। তবে এই পরিসংখ্যান মানতে নারাজ জেলা শিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পে জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী কোটা পূরণ করে বরাদ্দ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

মেহেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নিয়ে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১০টি কেন্দ্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম করার কথা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, গোজামিল দিয়ে শিক্ষার্থী কোটা পুরণ করেছে দায়িত্ব পাওয়া মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক)।

শিক্ষা বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় ২০২১ সালে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার ১.৫ শতাংশ হিসাবে ২৪৩ জন ঝরে পড়েছে। এই রিপোর্টের বিপরীতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যুরো ঝরেপড়া দেখিয়েছে ৮১২৮ জন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যুরোর ওই পরিসংখ্যান নিয়ে জেলা শিক্ষা বিভাগের আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। জেলায় ২১০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রে ৬৩০০ জনকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, যা জেলার শিক্ষা বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত হয় মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক)। এদিকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাড়ির বারান্দায়, বাড়ির ছাদে চলছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রে সিকিভাগ শিক্ষার্থীও উপস্থিত থাকে না। শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ৩টি করে খাতা দেয়ার কথা থাকলেও গত ৯ মাসের মধ্যে ৬ মাস খাতা দেয়া হয়নি। প্রতিটি খাতার দাম ২৫ টাকা হিসাবে না দেয়া খাতার মূল্য দাঁড়ায় ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিকেন্দ্রে বসার জন্য ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি করে ম্যাট থাকার কথা। ২১০ কেন্দ্রের ম্যাটের দাম পড়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ম্যাটের বদলে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ১শ টাকা দামের পাটি পেড়ে বসতে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে বৈদ্যুতিক পাখা থাকার কথা থাকলেও কোনো স্কুলে পাখা দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর ড্রেস দেয়ার কথা। গত ৯ মাসে দেয়া হয়নি কোনো ড্রেস। নানা সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ভাতা জনপ্রতি ১২০ টাকা। এ পর্যন্ত সেটাও দেয়া হয়নি। মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলায় ঝরেপড়া শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫-৩০ জন করে শিক্ষার্থী নিয়ে ২১০ কেন্দ্রে ৬৩০০ শিক্ষার্থী থাকার কথা। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুল চালু রাখার নিয়ম করা হলেও সেই নিয়ম মানা হয় না। সরজমিনে কোনো কেন্দ্রেই ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি শিক্ষাথিী দেখা যায়নি।

সদর উপজেলার বাজিতপুর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রটি করা হয়েছে শালিকা গ্রামে মনিরুল ইসলামের বাড়িতে। দুদিন ওই স্কুলে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহানাজ পারভিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বাবার অসুস্থতার কারণে তিনি দুদিনের ছুটিতে আছেন। সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের শোলমারি গ্রামে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ১৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও কেন্দ্রের শিক্ষক তানিয়া খাতুনের দেখা মেলেনি। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর পেয়ে কেন্দ্রে ছুটে আসেন। তবে তিনি বিদ্যালয় প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি।

জেলা শহরের উপকন্ঠে বামনপাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রটি আজ এ বাড়ির বারান্দায় কাল অন্য বাড়ির বারান্দায়। শেষে থিতু হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে জেসমিন আহমেদ বুলুর বাড়ির বারান্দায়। সেখানে সাকুল্যে ১০ জন শিক্ষার্থী বসতে পারবে। সরজমিনে উপস্থিত দেখা যায় ৯ জনের। এর মধ্যে সাব্বির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী পাশের বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এবং নুরহোসেন নামের এক শিক্ষার্থী শিশুশিক্ষা স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্র বলে স্বীকার করে। অন্যরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে। স্কুলের শিক্ষক আফসানা ফেরদৌস বলেন, ওরা দুজন পাশের স্কুলের ছাত্র। এখানে অতিরিক্ত শিক্ষা পেতে আসে।

মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের (মউক) নির্বাহী কর্মকর্তা আশাদুজ্জামান সেলিম বলেন, প্রতিটি কেন্দ্র নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী আমাদের কেন্দ্রে নেই।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আপিল উদ্দীন বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নিয়ে বেশ কয়েকবার পরিসংখ্যান দিয়েছিলাম। পরিসংখ্যান উপেক্ষা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে আমরা আর বাদানুবাদে যাইনি।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর মেহেরপুরের সহকারী পরিচালক কবির উদ্দীন মোল্লা বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থী কম এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। সত্য হলে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App