×

জাতীয়

মানবাধিকার ইস্যুকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৬ পিএম

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ মানবাধিকার প্রশ্নে অনেক দূর এগিয়েছে। যেসব দেশ এখন ইস্যুটি নিয়ে অনেক বেশি সোচ্চার, তারাও এতটা এগোতে পারেনি। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, পদে পদে উন্নতিও হয়েছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘স্ট্র্যাটেজিক টুল’ (কৌশলগত হাতিয়ার) হিসেবে এদেশের উপর মানবাধিকার ইস্যুটি ব্যবহার করছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীস্থ ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘মানবাধিকার প্রশ্ন ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।

আলোচনার সূত্রপাত করে এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে মানবাধিকার রক্ষার জন্য। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। এর দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে, অনেক বিতর্ক ও বিভেদ রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সব দেশেই কম-বেশি আছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, মানবাধিকার বিষয়টি অনেক বড় বিষয়। মানুষের পেটে ভাত, মাথার উপর ছাদ না থাকলে, পরনে কাপড় না থাকলে, মানবাধিকারসহ অন্য বিষয়গুলো অনেক দূরের বিষয়। ১৯৯৬ সালেও দেশের অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থানে ছিল না। এখনো দেশের অর্থনীতি অনেক দূরে যাওয়ার বিষয় আছে। সেই জায়গায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সিভিল এডমিনিস্ট্রেশনের (বেসামরিক প্রশাসন) প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পুলিশসহ সব ফাউন্ডেশন কোর্সের সময় এই বিষয়গুলো পড়ানো হচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে গত ৫০ বছরে আমরা যতটা করতে পেরেছি, বিষয়টি নিয়ে যারা সোচ্চার তারা নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের এই পর্যায়ে এর ধারে-কাছেও ছিল না। আমরা কিন্তু পদে পদে এ ক্ষেত্রে উন্নতি করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানও কিন্তু বলেছেন, কেবল এদেশেই স্থানীয় পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটি নয়। উন্নত বিশ্বেও কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। বাংলাদেশের যেসব সংস্থার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো তো রাষ্ট্রের একটি অংশ। এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী, সেটাই খুব জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকার নিয়ে কী বলছে, সেটা বোঝা উচিত।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বলেন, একটি কথা আছে, ‘আপনার স্বাধীনতা শেষ হয় সেখানে, যেখানে আমার নাকের ডগাটি শুরু হয়’। এটা মানবাধিকার প্রশ্নে একটি ভালো সংজ্ঞা। এটা আমরা মেনে চলতে পারলে মানবাধিকার নিয়ে কথার দরকার পড়বে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে রিপোর্ট করলেই সেটি সত্য হবে, এমনটিও বলা যাবে না। তারা তাদের কাজ করবে। এ সময় কথিত ‘আয়না ঘর’ নিয়েও কথা বলেন তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদন যারা করেন, তারা মানবাধিকার নিয়ে কতটা ধারণা রাখেন- সেটিও এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে তারা বছরে বছরে নিজের মতো বিষয়টি জানান দেয়। আমি দায়িত্বে থাকাকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, তারা সবসময় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে গুলিয়ে ফেলে। দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। মানবাধিকার তখনই হয়, যখন একজন মানুষের অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বা রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় লঙ্ঘিত হয়। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে, এটা সত্য।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কিছু বলা হয়, তারা প্রতি বছর একটা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। মানবাধিকার ইস্যুটি কৌশলগত বা কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে আমরা দেখেছি। বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়টি কেমন- এই দুটোর মধ্যে পার্থক্যটাও আমাদের জানতে হবে। ইরানের সাম্প্রতিক আন্দোলন দেখলেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা দেখি- কতগুলো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রো-অ্যাকটিভ (সক্রিয়) থাকে, আবার তাদের মিত্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না। ফলে এই প্রশ্নগুলো থেকেই যাবে। কারা গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাচ্ছে আর কারা পাচ্ছে না, সেখানে রাষ্ট্রের নামগুলো দেখলে আমরা আশ্চর্য হই। জেনোসাইড (গণহত্যা) করা রাষ্ট্রও আমন্ত্রিত হচ্ছে। অথচ আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।

মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশী কবির বলেন, প্রত্যেক দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আমাদের দেশের সিস্টেমেও কিছু কিছু আছে। আমাদের রক্ষা করবে যে প্রতিষ্ঠান, তার একজন দায়িত্বশীলের ব্যাখ্যা ভুল হতে পারে না। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, মৌলিক অধিকারগুলোই হল আমাদের মানবাধিকারের আসল জায়গা। এটা লঙ্ঘিত হলে আমি ধরে নেব যে- আমরা স্বাধীনতা থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছি। ১৯৭৫-এরপর থেকে এই দূরে সরে যাওয়া শুরু হয়, তার আগেও দু’একটি ক্ষেত্রে হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App