×

অর্থনীতি

বড় অপরাধে ফৌজদারী মামলা চান বাণিজ্য সচিব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৪১ পিএম

বড় অপরাধে ফৌজদারী মামলা চান বাণিজ্য সচিব

রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ অন্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ

ভোক্তা অধিকার আইনে ৩ ধরনের ব্যবস্থা আছে‌। বাজার অভিযানে জরিমানার সঙ্গে ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলাও করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মহাপরিচালকের অনুমোদন লাগবে। তাই হয়তো করা হয় না। কিন্তু আমার আজকের বক্তব্য স্পষ্ট বড় বড় অপরাধে ফোজদারি মামলা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

রবিবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ নির্দেশ দেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবন মিলনায়তনে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ও ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, নকল ও ভেজাল দেওয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ আইন আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আইন আছে। ভোক্তা আইনে ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে। একদিকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে আবার জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, অফিসেও অভিযোগের শুনানি করা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে শাস্তিরও ব্যবস্থা হচ্ছে।

বক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিনিয়র সচিব বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ, শুধু অভিযান করে সব করা যাবে না। দেশে খাদ্যের মান দেখার জন্য বিএসটিআই আছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ অনেকটা কমে যাবে।

ধর্ম থেকে শুরু করে সব জায়গায় প্রতারণা না করতে বলা হয়েছে। শুধু সরকারের ১০০ থেকে ২০০ জন অফিসার দিয়ে কি সব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা শুধু লাভের জন্য যেন ব্যবসা না করি।

তিনি আরও বলেন, নিজ নিজ জায়গায় সবাই কাজ করলে ভোক্তা আইন এক সময় লাগবে না। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন লাগবে। কারণ, দেশের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা থাকবে না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকবে। তাই তাদের অসম প্রতিযোগিতায় দেখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন থাকতে হবে। চাল, আটা ময়দা ও ডিটারজেন্টে বেশি দাম নেয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এখন প্রতিযোগিতায় কমিশনে আসতে হচ্ছে। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হতভাগ হয়ে যাচ্ছে এটা আবার কী। কিন্তু মনে রাখতে হবে গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হচ্ছে। কারণ, আইন অমান্য করলে জরিমানা পেতেই হবে, যোগ করেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেজালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও আমরা ভেজাল দিচ্ছি। খোলা তেলে ভেজাল দিয়ে বেশি দাম নিচ্ছি। এ থেকে মুক্তি চাই। পৃথিবীতে কোথাও খোলা তেল নেই। তাই আমাদেরও খোলা তেল বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। অন্যের পণ্য এনে ব্যবসা করা যাবে না। ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে গিয়ে ভোক্তা আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল করতে কিছু নিত্যপণ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিৎ। তেল, চিনির দাম সরকার বেঁধে দিয়েছে। তবে সব জায়গায় ধরা ঠিক না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে নীতি-নৈতিকতার মধ্যে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আইন করলেও অনেকে নিজেই মানে না। এনবিআর কাউকে অহেতুক ২০০ শতাংশ জরিমানা করলে এটা ভোক্তাদের ঘাড়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সবাইকে সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে পরিমাণ কমিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে মামলা করা হয়েছে। এমন কোনো কাজ করা ঠিক হবে না যাতে ভাবর্মূতি নষ্ট হয়। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। কারণ ইচ্ছা করলেই জোর করে আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না।

এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না করতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে টাকা থাকলেও জিনিস পাওয়া যাচ্ছে না। ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা গেলেও বর্তমানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ২৫ ডলারের জ্বালানি ১৫০ ডলার হয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের কৃষক ফসল উৎপাদন করে, প্রবাসী যোদ্ধারা রেমিট্যান্স এনে ও রপ্তানিকারকরা পণ্য রপ্তানি করে দেশকে ভালো রেখেছেন। তারপরও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এজন্য সরকার বিলাসী পণ্যে বেশি কর বসিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মো. জসিম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরাও ভোক্তা। তাই আমরা সবাই এক পক্ষ। তবে কেউ দুষ্কৃতকারী থাকলে আমরা তার পক্ষে নয়। এটা দেখার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App