×

সম্পাদকীয়

আশুলিয়ায় লিখন খুন : কিশোর গ্যাং কালচার রুখতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০৪ এএম

গ্যাং কালচার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। তুচ্ছ ঘটনায় বখে যাওয়া কিশোরদের এক গ্রুপ হামলে পড়ছে অন্য গ্রুপের সদস্যদের ওপর। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বাইরেও ঘটছে খুনের ঘটনা। সর্বশেষ আধিপত্য, মাদক সেবন ও পুরনো আক্রোশের জেরে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় কাইচ্চাবাড়ি কিশোর গ্যাং ও গোচারটেক ভাই-বেরাদার কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ভাই-বেরাদার গ্যাংয়ের মেহেদিকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন লিখন। এ ঘটনায় র‌্যাব-৪ কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বুধবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব ৪-এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক। জানা গেছে, গত ৪ জুলাই আশুলিয়ার পলাশবাড়ীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হন সিরাজগঞ্জের আব্দুল মজিদের ছেলে লিখন। তিনি পলাশবাড়ী এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। আহত অবস্থায় লিখনকে উদ্ধার করে সাভারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৫ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন লিখনের চাচা শরিফুল ইসলাম বাবু। হত্যায় অংশ নেয়া সবাই কিশোর। এই কিশোররা আগামীর ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ২০টি হত্যার ঘটনা ঘটছে। এর বেশির ভাগ ঘটনায় কিশোর অপরাধীরা জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। ঢাকার শিশু আদালতের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর-তরুণদের সিনিয়র-জুনিয়র দ্ব›েদ্ব ৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর পুলিশের তথ্য মতে, গত ১৭ বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে ১২০ জন খুন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App