×

সম্পাদকীয়

জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪৩ এএম

জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। জঙ্গিরা নানাভাবে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। বাংলাদেশে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও শঙ্কা এখনো আনসার আল ইসলামকে নিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। ভেতরে ভেতরে এরা সুসংগঠিত হওয়ার কাজ চালাচ্ছে। তাদের সহিংস কর্মকাণ্ড দেশের জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হিজরতের নামে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে ঘরছাড়া অনেক তরুণ পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় সেখানে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। গোপনে উগ্রপন্থি কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। এ শঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিদের ধরতে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত অভিযান। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গত দুই বছরে বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ পেয়েছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে ইতোমধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করেছে র‌্যাব। হিজরতের নাম করে জঙ্গিবাদের নতুন মেরুকরণ এক ভয়াবহ নাশকতার পূর্বাভাস। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। র‌্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরুণদের জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে। পরবর্তী সময়ে তাদের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এরপর রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা-সংক্রান্ত অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন ভুল তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে ব্রেইন ওয়াশ করে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে উৎসাহী করে তোলা হয়। ইতোমধ্যে যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের অনেকের পরিবার জানে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণরা চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছে। কেউ কেউ নিয়মিত পরিবারকে অর্থও পাঠিয়েছে। এভাবে কৌশলে চলছে জঙ্গিদের মিশন। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে হলি আর্টিজানে হামলা একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা বলে মনে করি। বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। বলা যায়, দেশে জঙ্গি তৎপরতা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগাম তথ্য নিয়ে বেশকিছু জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এই তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গি ধরপাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে নতুন করে জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার ধারাও। পাশাপাশি জঙ্গি দমন অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় নব্য জেএমবি বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতা কীভাবে ও কিসের জোরে চলছে, তা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করা দরকার। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মূলোৎপাটন করতে না পারলে তাদের অপব্যাখ্যার ফাঁদে পড়ে যুবসমাজ বিপথগামী হয়ে পড়বে। জঙ্গিরা মূলত ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে তরুণদের দলে টানছে। কেবল সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এ সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব মুছে দিতে হবে। জঙ্গিবাদে জড়িতদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও সুশিক্ষার বিকল্প নেই। এ ছাড়া জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন কখনোই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তাদের জনবল সংকটও কখনো স্থায়ী হয়নি। আমরা মনে করি, জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ হলে এদের তৎপরতাও কমে যাবে অনেকাংশে। তৃণমূল পর্যায়েও জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App