×

জাতীয়

ওষুধের কৃত্রিম সংকট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

ওষুধের কৃত্রিম সংকট!

ওষুধের দোকান। ছবি: ভোরের কাগজ

ফার্মেসিতে মিলছে না চোখের ড্রপ, রাখা হচ্ছে বাড়তি দাম

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে একজন মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ শতাংশই খরচ হয় ওষুধ বাবদ। অথচ সেই জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দামই নানা অজুহাতে বাড়ছে। শুধু তাই নয় দাম বাড়াতে কারসাজি করে বিক্রেতারা বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকটও তৈরি করছে। চাহিদা থাকার পরও মিলছে না কিছু ওষুধ। আবার মিললেও সেগুলোর মেয়াদ শেষের পথে। বলা হচ্ছে, সরকার ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বেঁধে দিলেও খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই তা মানছেন না। আমদানি করা ওষুধের দামের ওপর যেনো কারোরই নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের পর সেপ্টেম্বরেও অর্ধ শতাধিক ধরনের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের বাড়তি মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্প্রপতি সরকার সর্বোচ্চ ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু ওষুধের দামের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যে প্রস্তাব করেছে, সরকার তার চেয়ে বেশি মূল্য বেঁধে দিয়েছে- এমন ঘটনাও আছে। এসব কারণে আগে যে দামে ওষুধ কেনা যেত, এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, ওষুধ কিনতে গিয়ে অনেককেই অন্য খাতের খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসি ঘুরেও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বেসিলাক্স-৯ ওষুধটি খুঁজে পাননি মগবাজারের বাসিন্দা মনিকা। তিনি বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী গত ২ মাস যাবত মা’র জন্য বেসিলাক্স-৯ ওষুধটি কিনতে হচ্ছে। গত মাসে এলাকার ফার্মেসি থেকেই ওষুধটি কিনেছি। কিন্তু গত সপ্তাহে কোথাও ওষুধটি পাচ্ছিলাম না। পরে কলাবাগানের একটা ফার্মেসি থেকে ১০ দিনের ওষুধ কিনেছি। এক মাসের ওষুধ কিনতে চাইলেও বিক্রেতারা এর বেশি ওষুধ দিতে পারেননি। তারা জানিয়েছেন, কোম্পানি বাজারে ওষুধটি সরবরাহ করছে না। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আবারো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ওষুধ বদলে নিতে হবে।

এদিকে বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও চোখের জীবানুনাশক ড্রপ টিয়ারন কিনতে পারছেন না নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রভাষক রাখী দেবনাথ। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও যে কোনো ফার্মেসিতেই এই ওষুধটি মিলত। কিন্তু দুই সপ্তাহ যাবত তা মিলছে না। ঢাকাতেও কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে একটি মাত্র ফাইল পেয়েছি। আগে ১৭০ টাকা দিয়ে কিনলেও এখন সেটি কিনতে হয়েছে ১৮০ টাকায়।

সরজমিন দেখা গেছে, বেসিলাক্স-৯, রেনভেলার মতো কিছু ওষুধ এখন বাজারে মিলছে না। এছাড়া টিয়ারন, মক্সিফ্লক্সসিনসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ড্রপ এখন মিলছে না ফার্মেসিতে। ক্রেতারাও ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের কথার সতত্য মিলল গোপীবাগের নাহার ফার্মেসির মালিক আল মামুনের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, দেশজুড়ে চোখ ওঠা রোগটি ছড়িয়ে পড়লে চাহিদা অনুযায়ী জীবাণুনাশক ও এন্টিবায়োটিক ড্রপের সরবরাহ কম। কোম্পানিগুলো ড্রপ সরবরাহ করতে পারছে না। গত ১০/১২ দিন যাবত এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

চলতি বছরের ৮ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল সাব-কমিটির সভায় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এ ধারাবাহিকতায় ৩০ জুন ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু সব কোম্পানিই নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়েছে চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহবাগের একটি ফার্মেসির মালিক হোসেন আলী বলেন, সরকারের ঘোষণার আগেই কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। দাম বাড়ানোর জন্য প্রায় প্রতিদিন কোম্পানির লোক আমাদের বলে, এসএমএস পাঠায়। কোম্পানি দাম নির্ধারণ করে দিলে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না।

সূত্রাপুরের রংধনু ফার্মেসির এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের হাত-পা বাধা। ব্যবসা করতে এসে কেউ কি লোকসান দিতে চায়? কোম্পানি দাম বাড়াতে আমাদের উপর চাপ দেয়। আমরা ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। আর ওষুধের সংকট খুচরা বিক্রেতারা নয়; কোম্পানিগুলোই তৈরি করে থাকে।

চোখের ড্রপের সংকট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরে এক মাস এ ওষুধের চাহিদা থাকে। সেটিও খুব বেশি নয়। এছাড়া বছরের যে সময়টায় এ রোগ বেশি হয়, তখন সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো থেকে এই ড্রপ বিনা মূল্যে দেয়া হয়। ফলে কোম্পানিগুলো উৎপাদন কম করে। কিন্তু এবার হঠাৎ করে সারাদেশে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না।

প্রসঙ্গত; দেশে দেড় হাজারের বেশি ধরনের ৩৫ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশের বেশি ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৪৩টি কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App