জন্মদিনে অমিতাভের সংগ্রাম কথন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪৭ পিএম
অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত
প্রজন্মের পর প্রজন্ম অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে মুগ্ধতার মায়ায় জড়িয়ে রাখা মহাতারকার নাম অমিতাভ বচ্চন। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) তার জন্মদিন। জীবনের ৮০তম শরতে পা রাখলেন বলিউড শাহেন শাহ।
রুপালি ভুবনে অমিতাভের ৫৩ বছরের এ পথচল বিস্ময় জাগায়। বর্ণিল আর সফলতার স্বর্ণ শিখরে ওঠা একজন অভিনেতার জ্বলজ্বলে উদাহরণ তিনি। কিন্তু এই ঝলমলে সাফল্যের পেছনে রয়েছে অনেক সংগ্রামের গল্প। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর অনেক ত্যাগের ফলেই খ্যাতির চূড়া ছুঁয়েছেন তিনি। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
অমিতাভের জন্ম বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের এহালাবাদে। ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি মুম্বাইতে এসেছিলেন। হাতে ছিল শুধু একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স। অভিনয়ের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্নের নগরীতে পা রাখেন তরুণ অমিতাভ। তার ধ্যানজ্ঞানে ছিল শুধুই সিনেমা। তাই ওই সময়ে অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজও অবলীলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে পথের ধারে বেঞ্চে শুয়েও রাত কাটাতে হয়েছিল তাকে।
১৯৯৯ সালের এক সাক্ষাৎকারে সেই দুঃসময়ের দিনগুলোর কথা প্রকাশ্যে এনে অমিতাভ বলেছিলেন, ওই সময়ে আমার মাসিক আয় ছিল ৫০ রুপি। তখন বিজ্ঞাপনে কাজের জন্য ১০ হাজার রুপির প্রস্তাবও পেয়েছিলাম, কিন্তু গ্রহণ করিনি। কারণ, আমার মূল ফোকাস ছিল সিনেমায়। শুধু একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বোম্বে এসেছিলাম। ভাবনা ছিল, যদি অভিনেতা না হতে পারি তাহলে ক্যাব চালাবো। তখন আমার থাকার জায়গাও ছিল না। বেড়াতে গিয়ে বন্ধুদের বাড়িতেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি থাকা যায় না। এ কারণে কিছু রাত আমি মেরিন ড্রাইভের বেঞ্চে কাটিয়েছি, আমার দেখা সবচেয়ে বড় ইঁদুরগুলোর সঙ্গে।
তারকা হওয়ার আগে কম-বেশি সবারই দুর্দিন পার করতে হয়। কিন্তু তারকা হওয়ার পরও একবার ভয়ংকর আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছিল বিগ বি-কে। বাধ্য হয়ে নিজের কর্মচারীর কাছ থেকেও টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন তার ছেলে অভিষেক বচ্চন।
এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক জানান, তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রে অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা করছিলেন। ওই সময়ে তাদের বাড়িতে এত দুঃসময় ছিল যে রাতে খাবারের ব্যবস্থাও ছিল না। বাধ্য হয়ে অভিষেক দেশে ফিরে আসেন বাবা অমিতাভের পাশে থাকার জন্য। অভিষেক বলেছেন, আমি বস্টনে বসে থাকতে পারি না, যখন আমার বাবা এটাও জানেন না যে রাতে কী খাবেন! সময়টা এতই খারাপ ছিল। খাবার কেনার জন্য তিনি তার কর্মচারীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। তখন আমি বাবাকে ফোন করে বলেছিলাম, বাবা, আমার মনে হয় আমি মাঝপথে কলেজ ছেড়ে আসতে চাই এবং তোমার পাশে থাকতে চাই। যেভাবেই হোক, তোমাকে সহযোগিতা করতে চাই। অন্তত তুমি জানো, তোমার ছেলে পাশে আছে।
ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায়, অমিতাভ বচ্চনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় চার হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল সম্পদ এবং মহাতারকার খ্যাতি অর্জনের পেছনে তার কী অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছিল, কতটা ত্যাগ করতে হয়েছিল, সেগুলোর খুব কম অংশই মানুষ জানতে পেরেছে।
অমিতাভ বচ্চনের অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্ম বিভূষণ, পদ্ম ভূষণ ও পদ্মশ্রী পদক পেয়েছেন। ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লিজিয়ন অব অনার ও আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
২০১৮ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে মোট চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে দেশটির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন অমিতাভ বচ্চন। আজীবন সম্মাননাসহ মোট ১৬ বার পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার। এগুলো ছাড়াও আরও অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা রয়েছে তার প্রাপ্তির খাতায়।
এখনও দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। তুমুল জনপ্রিয় টিভি শো কউন বানেগা ক্রোড়পতি সঞ্চালনা করছেন, পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় কাজ চলছে হরদম। গত সাত অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত নতুন সিনেমা গুডবাই। দর্শক-সমালোচকের কাছে এটি পেয়েছে ভূয়সী প্রশংসা। বর্তমানে তার হাতে অন্তত ছয়টি সিনেমার কাজ রয়েছে। এগুলো হলো, গণপথ, উঁচাই, ঘুমার, দ্য উমেশ ক্রনিকলস, প্রজেক্ট কে ও বাটারফ্লাই।