×

সম্পাদকীয়

কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে পদক্ষেপ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪২ এএম

নদীমাতৃক দেশের ইতিহাস ক্রমেই মøান হয়ে যাচ্ছে। দেশের নদীগুলোর অবস্থা যে শোচনীয়, তা নদীর সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। এর পেছনে দখলদারিত্ব থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম জড়িত। চট্টগ্রামের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দখল ও দূষণের মহোৎসব চলছে। এমনকি কর্ণফুলী রক্ষায় হাইকোর্ট রায় দিলেও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় তোয়াক্কা করেনি। গত রবিবার ভোরের কাগজে প্রকাশ, দখল-দূষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের ‘হৃদপিণ্ড’ খ্যাত কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে অনেকগুলোর অস্তিত্ব¡ হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়ন’ পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলীর দুই তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকির মুখে। দূষণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরো ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে। দূষণের জন্য ৩০টি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত বর্জ্য, নগর বর্জ্য বিভিন্ন নালা-ড্রেন দিয়ে সরাসরি নদীতে মিশে যাওয়া, নদীর তীরে পোড়া তেল বিক্রি, কাগজ কারখানা থেকে নিঃসৃত বর্জ্য, জাহাজ মেরামত কারখানা থেকে পুরনো রং-মরিচা পানিতে মিশে যাওয়া, শুঁটকিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সবিক্রন-৪২৫ পানিতে ফেলা, অপচনশীল ভাসমান প্লাস্টিক, পলিথিন, মৃত পশু-পাখি সরাসরি নদীতে ফেলা, বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার, নৌকা ও জাহাজ নদীতে পরিষ্কার করা, কৃষিজমি থেকে সার ও কীটনাশক নদীর পানিতে মিশে যাওয়া, সিমেন্ট কারখানা ও নির্মাণাধীন এলাকা থেকে বালি ও অন্যান্য উপাদান পানির সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং নদীর তীরে ইটভাটা ও অবৈধ স্থাপনা। কর্ণফুলী নদীতে ৮৫টি মার্চেন্ট জাহাজ, ৪০৫টি কোস্টাল জাহাজ, ২৬৪টি মাছ ধরার ট্রলার, ৯টি টাগবোটসহ অনেক বিদেশি জাহাজ, ট্রলার, সাম্পান, ছোট নৌকা চলাচল করে। এসব নৌযানের ময়লা, পোড়া তেল সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ মাছ বাজার উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফকল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহ আমানত ব্রিজের মাঝ-পিলার বরাবর ২০০০ বর্গফুট নদী নতুন করে লিজ দিয়েছে, যা সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন। কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে দখল আর দূষণের মাধ্যমে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই নদীর সঙ্গে ২ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণ করে। জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। এরপর বড় পরিসরে ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে কর্ণফুলীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযান চললেও আশানুরূপ কোনো সাফল্য আমরা দেখিনি। কর্ণফুলী রক্ষা করতে একটি মহাপরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন শুরু না হওয়ায় তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। অবিলম্বে দখল ও দূষণ বন্ধ করতে জনসচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই। কর্ণফুলীসহ দেশের সব নদীকে বাঁচাতে হবে। নদীগ্রাস আগামী দিনে পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদীদূষণ ও দখল এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী হারাচ্ছে স্বাভাবিক নাব্য। নদীর পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বন্যা ও জোয়ারের পানি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। কর্ণফুলীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেভাবেই হোক কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে অবিলম্বে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ দেখতে চাই। কারণ চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে কর্ণফুলীকে বাঁচাতেই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App