×

সারাদেশ

আগাম জাতের শিম চাষে হাসছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ০৫:২২ পিএম

আগাম জাতের শিম চাষে হাসছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা

ছবি: ভোরের কাগজ

যতদূর চোখ যায়, চোখে মায়া ধরিয়ে দেয় বেগুনি রঙের ফুল। প্রথম দেখায় মনে হবে, কোনো বড় ফুল বাগানে প্রবেশ করেছেন। এমন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য ঈশ্বরদীর শিমক্ষেতগুলোতে। কৃষিপ্রধান ঈশ্বরদী উপজেলায় অন্য বছরগুলোর মতো চলতি বছরেও চাষ হয়েছে আগাম জাতের শিম। বিভিন্ন সংকটে খরচ বেশি হলেও ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে। সেই সাথে দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন শিম চাষিরা। কয়েকদিনের ব্যবধানে ১২০ টাকা কেজির শিম গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৬৫-৭০ টাকায়। এই সপ্তাহে আবার বাড়তে শুরু করেছে দাম। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে শিম।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ক্ষেতজুড়ে শুধু শিম আর শিম। আগাম শিমের পাশাপাশি চাষিরা শীতকালীন শিমের আবাদও করেছেন। তাই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে শুধু শিমের সমারোহ।

কৃষকরা জানান, প্রতি বছর আষাঢ়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে আগাম শিমের আবাদ শুরু হয়। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকেই ফলন পাওয়া যায়। এবার আষাঢ়-শ্রাবণে প্রচন্ড খরার কারণে শিম গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতের বহু শিম গাছ মরে গেছে। বেঁচে যাওয়া গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পরে বৃষ্টিপাতে এসব শিম গাছ সবল হয়ে উঠলেও ফলনে কিছুটা দেরি হয়েছে। লাভের আশায় বেশি টাকা খরচ করে । মাঝে দাম কমলেও বর্তমানে দাম নিয়ে খুশি তারা।

পদ্মবিলের শিম চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিমের বাজার এখন ভালো। তবে আগামী দুই-এক মাস পর দাম অনেকটাই কমে যাবে। যদি তেমন রোগবালাই না হয় শিম ক্ষেতে তাহলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি লাভ থাকবে।’

মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের শিম চাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা আবাদে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আবাদ ভালো হলে বিঘা প্রতি শিম বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’

বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, ‘আগাম জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে এখানকার কৃষকরা। শিম চাষে উৎসাহ বাড়ছে।’ মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আলিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে শিম চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তীব্র খরার কারণে শিমক্ষেতে কিছুটা শোষক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। চাষি ভাইদের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে আর তেমন কোনো রোগবালাই নেই। বাজারে এখন শিমের দামও বেশ ভালো।’

মুলাডুলি সবজি আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আশ্বিন মাসের এ সময়ে প্রতি বছর দু-আড়াই হাজার মণ পর্যন্ত শিম আড়তে বেচাকেনা হয়। মঙ্গলবার প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয় ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। অথচ বুধ ও বৃহস্পতিবার শিম বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে ১১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র মুলাডুলি ইউনিয়নে ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। ২০২১ সালে এ উপজেলায় ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। প্রচন্ড খরায় প্রথমে শিমগাছের কিছুটা ক্ষতি হলেও পরে বৃষ্টিপাতের ফলে আবাদ ভালো হয়েছে। আশাকরি সামনের দিনগুলোতে শিমের ফলন আরও বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App