×

জাতীয়

‘হিজরতকারী’ ৫৫ জনের ৩৮ জনই শনাক্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২২, ০৩:১৭ পিএম

‘হিজরতকারী’ ৫৫ জনের ৩৮ জনই শনাক্ত
‘হিজরতকারী’ ৫৫ জনের ৩৮ জনই শনাক্ত
‘হিজরতকারী’ ৫৫ জনের ৩৮ জনই শনাক্ত

গ্রেপ্তারকৃত ৫ জঙ্গি

‘হিজরতকারী’ ৫৫ জনের ৩৮ জনই শনাক্ত

গ্রেপ্তারকৃত ৫ জঙ্গি

এখন পর্যন্ত জঙ্গিবাদে জড়াতে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছেন ৫৫ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চট্রগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে রয়েছে। তারা সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের বিষয়ে কাজ করছে র‍্যাব।

নিখোঁজদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে চারজন, পটুয়াখালী থেকে ছয়জন, বরিশাল থেকে তিনজন, মাদারীপুর থেকে দুজন, সিলেট থেকে সাতজন, কুমিল্লা থেকে ১৫ জন, ঝালকাঠি থেকে দুজন এবং ঢাকা থেকে চারজন। এছাড়া, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরা, সুনামগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ ও টাঙাইল থেকে একজন করে মোট ৫৫ জন ঘর ছেড়েছেন।

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সঙ্গে জড়িত সংগঠনের দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তিনজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানান র‍্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সোমবার (১০ অক্টোবর) এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা হতে ৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় নিখোঁজ সংক্রান্তে গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই ঘটনায় র‌্যাব নিখোঁজ ও ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তদন্তকালে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গৃহত্যাগ (হিজরত) করেছেন তারা। ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে চারজন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব।

গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।

নিলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত তিনজন ও নিরুদ্দেশ হওয়া ৪ তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। উগ্রবাদী ওই সংগঠনটি সম্পর্কে গ্রেপ্তারকৃত গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা হতে কুমিল্লার শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. হোসাইন (২২), ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় পাঁচটি উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রায় তিনশত লিফলেট ও পাঁচটি ব্যাগ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে ও বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করতো। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ তরুনদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করতো। সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলতো।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেপ্তার হোসাইন এক বছর আগে, গ্রেপ্তার সাইফুল দেড় মাস আগে এবং গ্রেপ্তার রাকিব দুই মাস আগে নিখোঁজ হয়।

জানা যায় যে, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। এছাড়াও আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো।

নিখোঁজ অর্ধশতাধিক, তালিকাভুক্ত ৩৮ জন

বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকুরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ প্রদান করতো।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে সংগঠনের গ্রেপ্তার সদস্যদের মাধ্যমে আমরা ৩৮ জনের জানতে তথ্য পেয়েছি, যাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।

তাদের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে। সেখানে তারা বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।

উগ্রবাদের অর্থায়ন করছে গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ

গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হত। সংগঠনের জন্য তিনি বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন।

পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে তিনি প্রায় দুই বছর যাবৎ একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। তিনি ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন জানা গেছে।

গ্রেপ্তার নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন বলে জানায়।

গ্রেপ্তার হোসাইন পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ও রং মিস্ত্রী। তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। দীর্ঘ এক বছর যাবত তিনি সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

গ্রেপ্তার রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। তিনি গ্রেপ্তার হোসাইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হয়। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি প্রায় দুই মাস পূর্বে নিরুদ্দেশ হন।

গ্রেপ্তার সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী হতে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হন। তিনি নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়ান।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ বিভিন্ন নামে বেনামে মাদ্রাসা মসজিদের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) জন্য অর্থায়ন করতেন। আমরা এখনো প্রাথমিক স্তরে কাজ করছি। সংগঠনের কে বা কারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম থেকে বেরিয়ে আসারা এই সংগঠনে জড়াচ্ছে।

নিখোঁজদের কেউ দেশ ছেড়েছে, কিভাবেইবা তারা পরিবারে টাকা পাঠাতেন? জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৩৮জনের কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারিনি। দুই দফায় ৬ তরুণসহ গ্রেপ্তার ১২ জন এই তালিকার বাইরে। তাদের ৩৮ জনের কাউকে গ্রেপ্তার করা গেলে বোঝা যাবে কেউ দেশত্যাগ (হিজরত) করেছে কিনা। নিখোঁজদের কেউ কেউ পরিবারে টাকা দিচ্ছেন, পরিবার জানে তারা বিদেশে। তবে তারা দেশে থেকেই অল্প কিছু টাকা পরিবারে পাঠাচ্ছেন। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

কমান্ডার আরও বলেন, নিরুদ্দেশ হয়ে গৃহত্যাগ অবশ্যই অ্যালার্মিং। আমরা চেষ্টা করছি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App