×

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রদূতদের রাজনীতিতে নাক গলানো বন্ধ হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪৫ এএম

বিদেশিদের নাক গলানো বন্ধ হবে কখন? জাতীয় নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি। এর মধ্যে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদেশি দূতদের আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ দুঃখজনক। আমরাও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে। ইতোমধ্যে একটি নতুন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের প্রতি সবার আস্থা থাকা প্রয়োজন। আগ বাড়িয়ে বিদেশি দূতদের মন্তব্য করা, মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ পুরনো ঘটনা, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে যখন সামরিক বাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে তখন থেকেই বাংলাদেশ কী করবে, কীভাবে করবে- সব নির্দেশনাই আসতে থাকে বিদেশ থেকে। পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তখন রাজনীতির জন্য অর্থের জোগান হলেও রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে। এমন হস্তক্ষেপের চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হলেও কমছে বলা যাবে না। দেখা যাচ্ছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা কিছুদিন ধরে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন অবস্থার জন্য আমরা দায়ী। বিদেশিদের কথা বলার সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। এ দেশের রাজনীতিবিদরা যখনই সরকারের বাইরে থাকেন তখনই ‘নালিশ’ নিয়ে গিয়ে হাজির হন বিদেশিদের কাছে। এটা এখানকার রাজনৈতিক বাস্তবতা। রাষ্ট্রদূতদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শিষ্টাচারবহির্ভূত একটি কাজ। তবে শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কূটনীতিকরা যেমন একদিকে দায়ী, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান না থাকাও সমানভাবে দায়ী। আগামী নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশের সহযোগিতা চেয়ে কার্যত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বিএনপি। এটার সুযোগ নিচ্ছে বিদেশিরা। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ছাড়াও সাতাশ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত। তাদের অবস্থান স্পষ্ট; অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান পশ্চিমারা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়, এটি সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের।’ গত সোমবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হোমসের মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শনে গিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ব্রিটেন। চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগমুক্ত নয় তারা। তবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের সহিংসতা নয়; বরং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চান তারা। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বদনাম করা বা নালিশ করার রাজনৈতিক পদ্ধতি থেকে সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর বেরিয়ে আসা দরকার। যাতে বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য প্রয়োজন সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান। নিজেদের ভুল, নিজেদের অপকর্ম এসবের দায় ও দায়িত্ব যেমন নিজেদের, তেমনই এসব শুধরানোর দায়িত্বও আমাদেরই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App