×

সম্পাদকীয়

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধস : বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধ করুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:৩৭ এএম

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধস : বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধ করুন

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। ছুটির দিনে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে জায়গাটি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় পর্যটকরা ছুটে আসেন। তবে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পাড়ে কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় ৫ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে পাহাড় ধসে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে থাকে। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ২৪৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বাটালি হিল ও বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমিধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা। এত ব্যাপক আকারে না হলেও পাহাড় ধস এবং এতে হতাহতের ঘটনা কিন্তু প্রতি বছরই ঘটছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে- এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা? গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের প্রায় ৭০০ একরে ছোট-বড় ১২টি পাহাড়ে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি বাড়িঘর রয়েছে এবং অবৈধ এসব ঘরে কমপক্ষে আড়াই লাখ মানুষ বাস করছে। বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে প্রশাসনের জোরালো তৎপরতা দেখা গেলেও কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামটি এসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো পাহাড় ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। ফলে পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড় ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড় ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। সর্বোপরি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App