×

জাতীয়

কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫২ পিএম

কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিবকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের সদস্যরা ( ইনসেটে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব)। ছবি : ভোরের কাগজ

জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষার্থী রাকিবকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।‌ গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো. রমজান (২০), আল আমিন (২০), বিজয় (১৭), ইসমাইল হোসেন‌ ওরফে পপকর্ন (১৮) ও মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে সাইমন (১৭)।

যশোর, ঝালকাঠি, আশুলিয়া ও রাজধানীর মিরপুর এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সিনিয়র গ্রুপের সদস্য রাকিবের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটায় গ্রেপ্তারকৃতরা।

কিশোর গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-চার এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক। শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সিও মোজাম্মেল বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পল্লবীর সি-ব্লকে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিবের উপর এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের প্রধান রমজান ও আল-আমিনসহ অন্যান্য সহযোগীরা হামলা করে। হামলাকারীরা পেছন থেকে ভিকটিমের শরীরের পিছনের অংশ পিঠে চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ হামলায় ভিকটিম রাকিবের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হামলায় আহত হওয়ার পূর্বে ভিকটিম চলতি বছর অনুষ্ঠিত এসএসসির পাঁচটি পরীক্ষা দিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ষষ্ঠ পরীক্ষা দিতে আসলে পরীক্ষা চলাকালে সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়ে সে। তখন তাকে পরীক্ষার হল থেকে আবারও হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

এ হামলায় বর্তমানে ভিকটিমের মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্থসহ শরীরের নিচের অংশ পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় রমজান, আল আমিন, বিজয়, ছোট রমজান, পপকর্ন ও হাসিবসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-চার এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তর একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) র‌্যাব-চার এর একটি চৌকস দল রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও ঢাকা জেলার আশুলিয়া, যশোর এবং ঝালকাঠিতে অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাচেষ্টা মামলার পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ভিকটিম রাকিব ও গ্রেফতারকৃত আসামিরা মিরপুর-১২ এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা আছে। সেখানে সিনিয়র গ্রুপ জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি পৃথক কিশোর গ্যাং রয়েছে যারা এলাকায় ইভটিজিং, ছোটখাট ছিনতাইসহ মাদক সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত থাকে। ওই দুইটি গ্রুপ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত থাকে। ভিকটিম রাকিব সিনিয়র গ্রুপের সাথে চলাফেরা ছিল এবং গ্রেফতারকৃত আসামিরা জুনিয়র গ্রুপের সদস্য। ঘটনার কয়েকদিন আগে জুনিয়র গ্রুপের সদস্য আসামি রমজান, আল আমিন, বিজয়, ইয়াসিনসহ আরো পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে মিরপুর-১২, ডি ব্লকে ধূমপান করার সময়ে তাদের পাশ দিয়ে সিনিয়র গ্রুপের কয়েকজন সদস্য গেলে আসামিরা তাদেরকে কোন প্রকার সম্মান না দেখানোয় সিনিয়র গ্রুপের সদস্যরা তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকিসহ ধস্তাধস্তি ও চর-থাপ্পর মারে।

পরবর্তীতে এই ঘটনার রেশ ধরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২, ব্লক-সি এর কাটা গলি’তে জুনিয়র গ্রুপের ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র (ছুরি, সুইস গিয়ার, হকি স্টিক, এসএস পাইপ, লোহার রড) নিয়ে ভিকটিম রাকিবকে একা পেয়ে পথরোধ করে। আসামি রমজান হত্যার উদ্দেশ্যে ভিকটিম রাকিবকে পেছন থেকে পিঠে উপূর্যপুরি চাকু দিয়ে আঘাত করে, আল আমিন, বিজয়, ইয়াসিনসহ অন্যান্য আসামিরা তাকে চর, কিল-থাপ্পরসহ উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সকলেই ওই ঘটনায় ভিকটিম রাকিবকে মারমিট ও ছুরিকাঘাতের সাথে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের পল্লবী থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও এ হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App