×

অর্থনীতি

 কমেছে এলসি খোলার হার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:০২ পিএম

 কমেছে এলসি খোলার হার

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। যা তার আগের মাস আগস্টের তুলনায় ৬৩ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে এলসি নিষ্পত্তি আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশের অধিক কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের একই সময়ের (সেপ্টেম্বর) চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটিই কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, ধারাবাহিকভাবে কমছে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি। তবে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমলেও সে তুলনায় আমদানি কমেনি। আর রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতিও। এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছিল তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে ফের মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে বিশ্ব। এ অবস্থায় আমদানি কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের টাকা ঠিকমতো ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে তদারকি জোরদার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে চলতি বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স বাড়লেও সেপ্টেম্বরে কমেছে। একই সঙ্গে টানা ১৩ মাস ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর দেশের রপ্তানিও কমেছে। এতে বৈদেশিক আয় নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত জুন মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৪৪ কোটি ডলার, জুলাইতে তা ৬৩৫ কোটি ডলারে নামে। আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ আরো কমে দাঁড়ায় ৬৩৩ কোটি ডলারে। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে আরো কমে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭০ কোটি ডলারে। তবে এলসি খোলার পরিমাণ যে হারে কমেছে, সে তুলনায় এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ একই হারে কমেনি। গত জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৭৫০ কোটি ডলার। পরের মাস জুলাইতে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি ডলারে। আগস্টে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ৭৩২ কোটি ডলারে নেমে আসে। সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে তা আরো ১৩২ কোটি কমে ৬০০ কোটিতে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারিতে নিষ্পত্তি হয় ৬৫৬ কোটি, মার্চে ৭৬৭ কোটি, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ও মে মাসে ৭০৫ কোটি ডলার। এ নিয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে ৬ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে।

এদিকে দেশে আমদানি কমলেও ডলার সংকট সহসাই কাটছে না। এ অবস্থায় বাজারে সংকট কাটাতে ডলার বিক্রিও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এভাবে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভেও চাপ বেড়েছে। গত বছরের (২০২১ সালের) আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এ রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

এদিকে ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে সম্প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস এসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ দাম নির্ধারণ করা হয়। বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় কিনতে পারবে ব্যাংক।

বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকায়। এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট এন্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। গত মাস সেপ্টেম্বরে বাফেদার রেমিট্যান্স কেনার সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তঃব্যাংক লেনদেন ও গ্রাহক লেনেদেনের জন্য ডলারের বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। সবশেষ ৩ অক্টোবরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ২৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০২ টাকা ৯০ পয়সা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App