×

জাতীয়

৭ কারণে গ্রিড বিপর্যয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৯ এএম

৭ কারণে গ্রিড বিপর্যয়

প্রতীকী ছবি

সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের তাগিদ > ২০১৪ সালে ব্ল্যাক আউটের পরও মানা হয়নি সুপারিশ

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয়ে গত মঙ্গলবার অন্ধকারে ছিল দেশের অধিকাংশ অঞ্চল। প্রাথমিক তদন্তে ঘোড়াশাল থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। গতকাল বুধবার সংস্থাটির মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ জানতে পৃথক পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, সঞ্চালন লাইন বা সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারসাম্যজনিত তারতম্য, ট্রান্সমিশন ও সরবরাহ লাইনে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, গ্রিডের সঙ্গে গ্রিড কোডের নির্দেশনার সমন্বয়, চাহিদার সঙ্গে লোডের সমন্বয় না হওয়া, ফোনে ফোনে লোড ব্যবস্থাপনা, মানহীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। গ্রিড বিপর্যয়ের এসব কারণের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। অতীতের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা না নেয়াও এবারের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিটের দিকে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে রাত ১০টায়ও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। টানা ৬-৭ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের এলাকার কয়েক কোটি মানুষ। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্ল্যাক আউট। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্ব^রে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার ব্ল্যাক আউট হয়। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্ব^রে, ২০০২, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১৭ সালে জাতীয় গ্রিডে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। এক মাসের ব্যবধানে দেশে এটি দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটল।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার সময় বিপর্যয়ের সূত্রপাত হয়। তবে সেটি কেন হয়েছে, তা বলতে পারেনি তারা। ঘটনা অনুসন্ধানে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মূলত বিদ্যুৎ প্রবাহের ফ্রিকোয়েন্সিতে (তরঙ্গ) গরমিলের কারণে ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন কারণে সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে এটি বেড়ে গেলে কিংবা কমে গেলে দেখা দেয় গ্রিড ট্রিপ। প্রাথমিক অবস্থায় গত মঙ্গলবারের ব্ল্যাক আউটের মূল কারণ ছিল এই গ্রিড ট্রিপ। তবে এ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গ্রিড বিপর্যয় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে মান্ধাতা আমলের। এতে প্রায়ই ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারসাম্যজনিত তারতম্য দেখা যায়, ঘটে বিপর্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) কোন এলাকায় কত ঘণ্টা, কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও উৎপাদন হবে, তা এখনো ফোনে ফোনে ঠিক করে দেয়। এতে একটি ছোট বিপর্যয় সামাল দিতেও লেগে যায় দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া দেশের বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত রেন্টাল-কুইক রেন্টালের যন্ত্রপাতি নিম্নমানের হওয়ায়, মানহীন জেনারেটর ব্যবহার করায়, বেজ লোড সেন্টার স্থাপিত না হওয়ায় সঞ্চালন লাইনে ঘটছে ঘন ঘন বিপর্যয়।

২০১৪ সালের পরে গত মঙ্গলবার একই বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম আসাদুল হক বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হলেও যেখান থেকে বা যার মাধ্যমে ট্রান্সমিশন ঘটবে, সেখানকার সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয়নি। ট্রান্সমিশন ও সরবরাহ লাইনে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য বারবার এমন বিপর্যয় ঘটছে। এ ছাড়াও ভোক্তা পর্যায়ে নজরদারি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক অনেক দুর্বলতা এ ধরনের বিপর্যয়ের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এ হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ সক্ষমতা থাকলেও এর সরবরাহ ব্যবস্থায় রয়ে গেছে বড় রকমের দুর্বলতা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ধীর গতিতে চলা নীতির কারণে এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পিজিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থা এখনো যথেষ্ট দুর্বল। মূলত এখানে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন প্রয়োজন। না হলে, সামান্য ভোল্টেজের ওঠানামা বা ফ্রিকোয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে এমন দুর্ঘটনা আবারো ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনিস আহমেদ বলেন, পিজিসিবি যদি না বলে আসল সমস্যাটা কোথায়, তাহলে বাইরে থেকে সেটা জানা আমাদের জন্য মুশকিল। তবে সাদা চোখে যেটা বোঝা যায়, মেইনটেনেন্সের সমস্যার জন্যই এ বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতিটি যন্ত্রপাতিরই একটি মেয়াদ থাকে। এগুলো পুরনো হয়ে গেলে এক সেকেন্ডের ফ্রিকোয়েন্সি ডাউনে বড় রকমের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এমন কিছু একটাই ঘটেছিল। এ ব্যাপারে পিজিসিবিকে জানাতে হবে, আসল সমস্যাটা কোথায়। সমস্যা না জানলে তো সমাধান দেয়া সম্ভব নয়।

সামগ্রিক বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, অনেকেই বলছেন যন্ত্রপাতির কথা। যখন গ্রিডের সঙ্গে গ্রিড কোডের নির্দেশনার সমন্বয় ঘটে না, তখন এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে। বাকি সব বিষয় বাদ দিলেও ৩০ শতাংশ প্ল্যান্ট গ্রিডের আওতাভুক্ত হয়নি। এতে সাপ্লাই-ডিমান্ডে একটা বড় রকমের সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। সরবরাহের বিপরীতে চাহিদা যখন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়, তখন জেনারেটরগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অল্প সময়ের ব্যবধানেই এমন বিপর্যয় ঘটে যায়।

বিপর্যয় রোধে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, কোথায় কত টাকা বিনিয়োগ করছি, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোম্পানিগুলো গ্রিড কোডের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলছে কিনা। যতদিন পর্যন্ত গ্রিড কোডের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হবে, ততদিন এমন বড় বড় বিপর্যয়ের ঝুঁকি থেকে যাবে।

তিনি আরো বলেন, দেশে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ এখনো অর্ধেকের বেশি বাকি। সাত প্যাকেজের আওতায় চলছে এ কাজ। এর মধ্যে যমুনা ও পদ্মা নদীর এপার-ওপার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে কাজ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এ ছাড়াও হাতে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প। কিন্তু সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি না করে একের পর এক কেন্দ্র বসিয়ে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালের ব্ল্যাক আউটের পর করা সব সুপারিশ মানা হয়নি। সঞ্চালন প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল হয়নি। এই কারণেই এই বিপর্যয়। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বছরে একবার কোনো কারণে অল্প সময়ের জন্য গ্রিডে বিপর্যয় হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। গত সেপ্টেম্ব^রে একবার হয়েছে। গত মঙ্গলবার হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এটা স্বাভাবিক নয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নানা কথা শোনা যাচ্ছে, এটা স্যাবোটাজও হতে পারে। অনেকেই বলছেন, একটা গ্রিডে বিপর্যয় হলে জাতীয় গ্রিড এমনভাবে ফল করার কথা নয়। এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। তদন্তে আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় গ্রিড একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ। গ্রিড বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণ আছে। অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনে (গ্রিড) যদি তার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়, তাহলে গ্রিডের সার্কিট পুড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি. ডি. রহমতউল্লাহ বলেন, পুরো ব্যবস্থাপনাটি স্বয়ংক্রিয় এবং ম্যানুয়াল- উভয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হলেও বাংলাদেশে তা এখনো হয়নি। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এরপর সেটা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এই সিস্টেমের কোন একটিতে ত্রুটি দেখা বা সমস্যা হলে পুরো সিস্টেমটি ভেঙে পড়ে। তখন বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সঞ্চালন লাইন রয়েছে প্রায় ১৩,০০০ কিলোমিটার। সঞ্চালন লাইনের কোথাও একটি ত্রæটি দেখা দিলে পুরো সিস্টেমটা দুর্বল হয়ে যায়। ডিমান্ডের সঙ্গে পাওয়ার জেনারেশনের সমন্বয় থাকতে হবে। কিন্তু লোড বেশি বা কম হয়ে গেলে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ চাহিদার সঙ্গে লোডের সমন্বয় না হওয়া। যেমন অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হলে তা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করে। এছাড়া ঝড়ে বা গাছ পড়ে, পাখি বসলে, আগুন লেগে কিংবা খুঁটি উপরে গিয়ে বিদ্যুতের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।

তদন্ত কমিটির প্রধান এবং পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পিএন্ডডি) ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আজ (গতকাল) সকালে গ্রিড বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার জন্য আমাদের তদন্ত শুরু করেছি। তিনি জানান, কমিটি গ্রিড ভেঙে পড়ার কারণ চিহ্নিত করতে সাবস্টেশন ও পাওয়ার স্টেশন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করবে। এটির উপসংহারে পৌঁছাতে আরো সময় লাগতে পারে, কারণ এতে গ্রিড সিস্টেমের অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যা জড়িত।

তিনি আরো বলেন, আমরা একেবারে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ঘোড়াশালে গ্রিড বা বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো একটি লাইন ট্রিপ করেছে। সেই লাইনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য লাইন ওভারলোড হয়ে সেটাও ট্রিপ করেছে। এর ফলে পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বল্পতা দেখা দেয়।

মানহীন সঞ্চালনে হারাচ্ছে দম: বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা আধুনিক হয়নি সেভাবে। তারা বলছেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ অনেক বেসরকারি কেন্দ্রে মানহীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি আধুনিকায়ন না করা ও অ্যানালগ পদ্ধতিতে (ফোনে ফোনে) লোড ব্যবস্থাপনার কারণে জাতীয় গ্রিডে ঘন ঘন বিপর্যয় ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঞ্চালন লাইনের ফ্রিকোয়েন্সির (তরঙ্গ) ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে মূলত বিপর্যয় ঘটে। এটি হতে পারে হঠাৎ কোনো এলাকায় চাহিদা খুব বেশি বেড়ে বা কমে গেলে। এছাড়া অন্য কারিগরি কারণেও ফ্রিকোয়েন্সির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ওই গ্রিডে সংযুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হুট করে পরিবর্তিত চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যর্থ হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছে। গ্রিডে কয়লা, গ্যাস, সৌরসহ নানা উৎস থেকে বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে। সামনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ আসবে। সব মিলিয়ে গ্রিডে ফ্রিকোয়েন্সির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি, না হলে বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে।

ফোনে ফোনে লোড ব্যবস্থাপনা: দেশের বিদ্যুতের চাহিদা, উৎপাদন, সঞ্চালন পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনরাত কত ঘণ্টা সচল থাকবে, কখন কত মেগাওয়াট উৎপাদন করবে তাও নির্ধারণ করে এনএলডিসি। আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থায় এনএলডিসি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এসব কাজ করে। তবে বাংলাদেশে তা হয় না। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু ও বন্ধের নির্দেশনা, কেন্দ্র কত মেগাওয়াট উৎপাদন করবে- এর জন্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোনে নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে কোথাও চাহিদা বাড়লে বা কমলে সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

মানহীন বিদ্যুৎকেন্দ্র: বিশেষজ্ঞরা গ্রিড বিপর্যয়ের আরেকটি কারণ বলছেন, দেশে বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও দীর্ঘ মেয়াদের কিছু আইপিপি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে জেনারেটরগুলো মানসম্পন্ন নয়। এ ছাড়া রেন্টাল, কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো বেইজ লোডকেন্দ্র হিসেবে স্থাপন করা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App