×

জাতীয়

৭৯ কোটি টাকা পাচার করেছে বিগো বাংলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০২:১০ পিএম

৭৯ কোটি টাকা পাচার করেছে বিগো বাংলা

ফাইল ছবি

অশ্লীলতা ছড়িয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ১০৮ কোটি টাকা আয় করে নিয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিগো অ্যাপ। এক বছর তদন্ত শেষে আয়কৃত অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় সম্প্রতি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় বিগো বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়াও-জি ছাড়াও ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিগো বাংলার শেয়ারিং অ্যাপ বিগো লাইভের লাইভ চ্যাট ও লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ ও ভিডিও চিত্র দেখিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে। পরে ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রির নামে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৮ কোটি টাকা আদায় করে বিগো বাংলা। এর মধ্যে ২৯ কোটি টাকা আদালতের আদেশে ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হয়েছে। বাকি ৭৯ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

মামলার বাদী সিআইডির এসআই সোহেল রানা গতকাল জানান, বিগো লাইভের বিরুদ্ধে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করেন তারা। পরে অর্থ পাচারের কাগজপত্র জোগাড় সাপেক্ষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। মামলায় বিগো বাংলা লিমিটেড, বিগো বাংলার কর্মী এস এম নাজমুল হক, আরিফ হোসেন ও মনসন হোল্ডিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে আসামি করা হয়েছে।

বিগো অ্যাপের লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে গত বছরের জুন মাসে চীনা নাগরিক ইয়াও-জি ছাড়া ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। মামলার অপর ৪ আসামি হলেন- বিগো বাংলার কর্মী মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক ও আসমা উল হুসনা সেঁজুতি। চীনা নাগরিকসহ অন্যরা এখন কারাগারে। সেই ঘটনা থেকেই অর্থ পাচারের বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, বিগো বাংলার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম বিগো টেকনোলজি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় গত ২০১৬ সালে। গত ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর নিবন্ধন পায় তারা। বিগো বাংলার চেয়ারম্যান হলেন চায়নার নাগরিক জাই জুহাং, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াও জি এবং পরিচালক লি জুয়েলিং।

প্রতিষ্ঠানটির সংঘস্মারক অনুযায়ী, মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করার পাশাপাশি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়সহ ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করার কথা। ভিডিও চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রায় ডায়মন্ড কিংবা বিনসের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করার কথা নয়।

বিগো বাংলা লিমিটেড অর্থ পাচারের জন্য মনসুন হোল্ডিং লিমিটেডের গেটওয়ে সূর্যমুখী লিমিটেড থেকে অর্থ নিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর হিসেবে নিবন্ধিত নয়। বাংলাদেশে বিগো বাংলার দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই পর্যন্ত ওই দুটি হিসাবে জমা হয় ৪৩ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। জমা রয়েছে আরো ২৯ কোটি টাকা। আদালতের আদেশে ওই টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

বিগো বাংলার এমডি ইয়াও লির বাংলাদেশে দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে। সেই দুটি হিসাবে জমা হয় ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর বিগোর নাজমুল হকের ১২টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে দেয়া হয় ইয়াও লিকে।

এছাড়া নাজমুলের বিকাশ নম্বরে আরো ১৭ কোটি টাকা জমা হয়। এই টাকাও দেয়া হয় চীনা নাগরিক ইয়াওকে। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণ অনুযায়ী, বিগো বাংলার আরেক কর্মী আরিফের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে দেয়া হয়েছে ইয়াওকে।

বিগোর বক্তব্য

বিগো টেকনোলজির (বিগো) সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমাদের বিস্মিত করেছে। বিগো’র বৈশ্বিক নীতি অনুযায়ী আমরা কঠোরভাবে ও দৃঢ়তার সাথে স্থানীয় আইন মেনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করি। এছাড়াও, বিগো অপরাধ ও প্রতারণা সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে শূন্য সহনশীলতা নীতি মেনে চলে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের আইন ও বিধির ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং প্রাসঙ্গিক সকল আইনি কর্তৃপক্ষকে আমরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা প্রদান করা অব্যাহত রাখবো।

স্থানীয় আইন মেনে চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার বৈশ্বিক নীতি অনুসরণ করে বিগো। সবাই যাতে সুরক্ষিতভাবে ও নিরাপদ উপায়ে সারাবিশ্বের সাথে কানেক্টেড থেকে তাদের সুন্দর মুহূর্তগুলো একে অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারেন, তা নিশ্চিতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে নিরাপদ কমিউনিটি নিশ্চিতে বিগো’র দক্ষ ও কার্যকরী কনটেন্ট মডারেশন মেকানিজম রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের নির্দিষ্ট কমিউনিটি গাইডলাইন রয়েছে, যা আমরা কঠোরভাবে মেনে চলি। পাশাপাশি, আমরা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করি এবং অশ্লীলতা সহ অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট মডারেশনে আমাদের বাংলাদেশের কর্মী সহ দক্ষ টিম রয়েছে। ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে, আইনসম্মত চুক্তির মাধ্যমে বিগো এর সকল অংশীদারের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে, সকল অংশীদারদের ক্ষেত্রেও চুক্তির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক আইন ও বিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশে সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে, যেকোনো অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবো। পাশাপাশি, আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, তা নিশ্চিতে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App