×

জাতীয়

‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫৬ পিএম

‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা

ছবি: ভোরের কাগজ

‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা

উদ্ধারকৃত চিরকুট

‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা

উদ্ধারকৃত চিরকুট

‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা
‘হিন্দাল শাবকীয়ায়’ যোগ দিতে হিজরতে যায় তারা

গ্রেপ্তারকৃত সাত আসামি

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ সাতজনকে আটক করেছে র‍্যাব। মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন-হোসাইন আহম্মদ (৩৩), মো. নেছার উদ্দিনকে উমায়ের (৩৪), বদি আমিন (২৭), ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), মো. হাসিবুল ইসলাম (২০), রোমান শিকদার (২৪) ও মো. সাবিত (১৯)।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শাবকীয়া (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামীয় সংগঠনের ছাতার তলে আনতেই ঘড় ছেড়ে হিজরত করতে বলা হয় আটককৃতদের। তাদের পটুয়াখালী ও ভোলার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখানে তাদের সবকিছু থেকে দূরে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক তথ্য দিয়ে নাশকতামূলক কাজের জন্য উদবুদ্ধ করা হতো।

[caption id="attachment_373696" align="aligncenter" width="700"] উদ্ধারকৃত চিরকুট[/caption]

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চারজনসহ ৭জনকে আটকের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানী কারওয়ান বাজারের রাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, চলতি বছরের গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণের নিখোজের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিখোঁজের পরিবার গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এ ঘটনা গণমাধ্যমে বহুলভাবে আলোচিত হয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে নিখোঁজের উদ্ধারের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

[caption id="attachment_373697" align="aligncenter" width="700"] গ্রেপ্তারকৃত সাত আসামি[/caption]

তদন্তে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়ে তারা। যদিও ইতোমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে ৪ জন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‍্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১১ এর অভিযানে মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহাজ বাণী বই নোয়ে তাওহীদের ৪ কপি, জিহাদি উগ্রবাদ ভিডিও সংবলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।

[caption id="attachment_373686" align="aligncenter" width="700"] উদ্ধারকৃত চিরকুট[/caption]

তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আট তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামক এক যুবক গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যানপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। র‍্যাব ফিরে আসা নিলয়কে তার পরিবারের হেফাজতে রেখে ও জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। জানা যায় যে, গত ২০ আগস্ট সকালে নিখোঁজ পাঁচ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসে। পরবর্তীতে নোবেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিং এর কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নিলয়, সামি ও নিহল একত্রে গমন করে কিন্তু ভুলবশত তারা চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়। ভুল বুঝতে পেরে তারা রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে দায়িত্বরত পুলিশ তাদেরকে পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় ও পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতের বেলা হোটেল থেকে কৌশলে পলায়ন করে তাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় গমন করলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদেরকে লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে পূর্ব থেকেই অবশিষ্ট তিনজন অবস্থান করছিল। পরবর্তীতে নিলয়, নিহল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উন্নাহর তত্ত্বাবধানে একদিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসে এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠায়। পটুয়াখালীতে গ্রেপ্তারকৃত বনি আমিন নিলয়কে গ্রহণ করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যায় ও গ্রেপ্তারকৃত হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়ের সংগে পরিচয় করিয়ে দেয়। বনি আমিন নিলয়কে ৩ দিন তার বাসায় রাখে। তার বাসায় অতিথি আসায় পরবর্তীতে নিলয়কে হুসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসে। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নিলয়ের দেয়া তথ্যমতে বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। বনি আমিনের তথ্য মতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

https://www.youtube.com/watch?v=4HrAH5jB6qk

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত হাসিব ও রিফাত এক বছর আগে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর নিকট সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম হাতালার নিকট নিয়ে যায়। ফাহিম তাদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মুসলমানদের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করত ও ভিডিও দেখাত। এইভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলে। গ্রেফতারকৃত রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য গত ৪০ দিন পূর্বে নিরুদ্দেশ হয় এবং গ্রেফতারকৃত সাবিত ০২ মাস পূর্বে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ হয়। জানা যায় যে, সোহেল নামক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা হতে নিখোজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রেরণ করা হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজগুরবি নামক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো।

গ্রেপ্তারকৃত হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার ভাষ্যমতে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন হতে কতিপয় সদস্যদের একীভূত করে ২০১৭ সালে এই নব্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সংগঠনটি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শাবকীয়া" (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন, বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুঙ্গি এর বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় নেতা ও কর্মীরা একত্রিত হয়ে এই উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। গ্রেফতারকৃত হোসাইন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। তিনি ২০১৪-১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে সিরাজ নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হন। অদ্যাবধি ১৫-২০ জন সদস্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বলে জানায়।

[caption id="attachment_373687" align="aligncenter" width="700"] উদ্ধারকৃত চিরকুট[/caption]

মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নেছার উদ্দিন উমায়ের ভোলায় একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ২০১৯ এর পূর্বে উগ্রবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হন। তিনি হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। তিনি ০৯-১০ জন সদস্যের তত্ত্বাবধান ও প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত বণি আমিন উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে পটুয়াখালী এলাকায় কম্পিউটার সেলস এন্ড সার্ভিস এর ব্যবসা করে। সে সদস্যদের আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিল। সে ২০২০ সালে হোসাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অদ্যাবধি ২২-২৫ জন সদস্যকে আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে জড়িত ছিল বলে জানায়।

গ্রেপ্তারকৃত রিফাত কুমিল্লাতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়ণরত ছিল। গ্রেফতারকৃত হাসিব উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়ণরত এবং একটি অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। তারা হাবিবুল্লাহর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হতে গত ২৩ আগস্ট বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। গ্রেফতারকৃত রোমান পুর প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা করে গোপালগঞ্জে ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটারি বিষয়ক কাজ করত। সে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনটি সম্পর্কে ধারণা পায়। পরবর্তীতে সে প্রায় এক মাস পূর্বে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। গ্রেপ্তারকৃত সাবিত উত্তরা এলাকায় প্রায় এক মাস পূর্বে একটি ছাপখানায় স্টোর কিপার এর কাজ করত। সে তার একজন আত্মীয় ও অনলাইনে ভিডিও দেখার মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। সে গত জুন মাসে ঢাকায় সিরাজের সাথে দেখা হওয়ার পর প্রায় দুই মাস পূর্বে নিখোঁজ হয়। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App