×

জাতীয়

ইউএনওকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১১:৩১ এএম

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে মিথ্যা অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। ইউএনওর পিটুনির কারণে ৯ মাস পর এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন বলে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন তার ভাই। এ বিষয়ে কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে আবু জাফর ওরফে নফর আলিকে বেধড়ক পেটানোর কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বাড়িতে মারা যান। কিন্তু ওই উপজেলার ঘটনাস্থল বাচামারা বাজারে গিয়ে সরজমিনে তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন ঘটনা। কয়েকজন দোকানদার ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু জাফরের পেটে গ্যাস জমে পেট ফুলে যাওয়ার কারণে গত ১৫ মে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় আবু জাফর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আবু জাফরের ভাই সালাউদ্দিন ঠান্ডুর ফেসবুক আইডি পর্যালোচনা করে আবুজাফরের ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। মৃত আবু জাফরের ফেসবুক আইডিতেও (ঔধভড়ৎ অষর) বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের পোস্টে এবং পোস্টের কমেন্ট বক্সে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে গ্যাস জমে পেট ফুলে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে।

বেধড়ক পিটুনির অভিযোগের কোনো তথ্য স্থানীয় অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। সালাউদ্দিন ঠান্ডুর ফেসবুক পোস্টে তিনি ১৫ মে বিকালে জাফর আলী অসুস্থ উল্লেখ করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন। পরদিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটেও তাকে ট্যাগ করা একজনের পোস্টে রোগমুক্তি কামনা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। অথচ সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, তিনি বাড়িতে মারা গেছেন।

বাচামারা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরুল হাসানের মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে আমি উপস্থিত ছিলাম। ওই সময়ে আবু জাফরকে পিটিয়ে আহত করার যে অভিযোগ তার ভাই সালাউদ্দিন ঠান্ডু করেছেন এর কোনো সত্যতা বা ভিত্তি নেই বা এরকম কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ওই সময়ে উপস্থিত ইউএনওর গানম্যান মো. আঙ্গুর হোসেন বলেন, আমি ইউএনওর সাথেই ছিলাম। কাউকে পিটুনির ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরুল হাসান বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখের ঘটনা, করোনার থাবায় গোটা দেশ যখন আক্রান্ত, করোনা সংক্রমণ রোধে ওষুধ এবং জরুরি কিছু পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য কোনো দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনা জারি হয়। ওই সময় বাঁচামারা ইউনিয়নের বাঁচামারা বাজারের বেশ কিছু দোকান রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখার খবরে গত বছরের জুলাই মাসে পুলিশসহ মোবাইল কোর্টে বাঁচামারা ইউনিয়নের বাঁচামারা বাজারে গিয়ে রাত ১০টার দিকে অনেকগুলো দোকান খোলা দেখি। মোবাইল কোর্টের রায়ে অর্থদণ্ড দিলে কয়েকটি দোকান জরিমানার অর্থ প্রদান করে। আবু জাফর পনের বিশ মিনিট সময় চাইলে তাকে সময় দেয়া হয়।

এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে জুম মিটিং শুরু হয় যাতে আমি বাঁচামারা বাজারের পাশেই বাঁচামারা ইউনিয়ন পরিষদে বসে যোগদান করি। জুম মিটিং চলাকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বার গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয় অনেকেই পরিষদে আসে। জুম মিটিং শেষ হতেই ঠান্ডু নামের এক যুবক আমার কাছে এসে মুঠোফোন ধরিয়ে দিয়ে বলেন, এই নিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি হকচকিয়ে গেলেও ফোন নিই। কথা বলতে গিয়ে দেখি আমি আমার নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলছি। এতে আমি অত্যন্ত বিব্রতবোধ করি এবং বাবাকে বলি, আমার অফিশিয়াল বিষয়ে অপরিচিত লোকের মুঠোফোনে কথা বলতে আমি খুবই বিব্রতবোধ করছি। একথা বলে ফোন কেটে দিই। পরবর্তীতে জানতে পারি ওই যুবক ঠান্ডু (এলজিইডির আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক যে সংযুক্তিতে দৌলতপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী ঘিওর উপজেলায় কর্মরত) আমাকে বলে আপনি চাইলে বাংলাদেশের যেকোনো লোক দিয়ে আপনাকে ফোন দেয়াতে পারি। আমার ভাইয়ের জরিমানা আপনাকে দিতে পারব না। আমি পুলিশকে বলি, যেহেতু ঠান্ডু আসামি না বা মোবাইল কোর্টের মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, সেহেতু তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যান। ঠান্ডু বলে উঠে, কয়েক মিনিটে তোর বাপকে পাইছি, বুঝিস না আমি কে? এ কথা শোনার পর আমি আমার হাতে ঠান্ডুর ধরিয়ে দেয়া বাটন ফোনটি ছুড়ে মারি। অতঃপর অর্থদণ্ড পরিশোধ করলে আমরা উপজেলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। ওই ঘটনার ১ বছর পর অভিযোগ দাখিল করে। মূলত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য প্রায় ১০-১২ কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার করি, এতে দৌলতপুর উপজেলার একটি বিশেষ মহলের সার্থহানি ঘটে। এতে তারা বিভিন্ন বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ সম্বলিত দরখাস্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা শুরু করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App