×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে পাঠ প্রতিযোগিতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪০ এএম

শিক্ষা একটি সচেতন ও সুপরিকল্পিত সামাজিক প্রক্রিয়া। ব্যক্তিকে সার্থকভাবে জীবনযাপন করতে হলে ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে সে তার দায়-দায়িত্ব, অধিকার, কর্তব্য সম্পর্কে যথাযথভাবে অবহিত হয় না। এই ন্যূনতম শিক্ষাই হলো প্রাথমিক শিক্ষা, যা আবশ্যিক করার ওপর পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এর প্রভাব পড়বে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। একইভাবে গুণগত মাধ্যমিক শিক্ষা উচ্চশিক্ষাকে মানসম্মত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ মূলত একটি চেইনের মতো, যেখানে প্রথম ধাপটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে তা পরিপূর্ণভাব বিকাশের সুযোগ মেলে। মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি সমতাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশুদের মাত্র ৩৪ শতাংশ সাবলীলভাবে পড়তে পারে। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৮ শতাংশের গুনতে পারার প্রাথমিক দক্ষতা রয়েছে। প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়তে পারার প্রাথমিক দক্ষতার ঘাটতি উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে। অভিজিত ভি ব্যানার্জী তার পুওর ইকোনমিকস বইয়ে দেখিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে ৭-১৪ বছর বয়সি শিশুদের ৩৫ শতাংশই সাধারণ অনুচ্ছেদ রিডিং পড়তে পারে না এবং ৬০ শতাংশ শিশুদের ছোট গল্প পড়ার সক্ষমতা নেই। সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ ৪টি ইউনিয়ন বিশিষ্ট একটি উপজেলা যেখানে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৩টি। এই বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ১২ হাজার ৭৯৭ জন। করোনাকালীন সময়ে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে মারাত্মকভাবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর করোনা-পরবর্তী স্কুল ভিজিটের সময় দেখা যায় ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজি লিখতে এবং পড়তে পারে না, যা ভয়াবহভাবে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণেরও অন্তরায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনাক্রমে কামারখন্দ উপজেলায় রিডিং কম্পিটিশন, ২০২২ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দুই মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়, যেই সময়ের মধ্যে সাবলীলভাবে পড়তে পারে এরকম শিক্ষার্থী এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য রিডিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য অপর চারটি ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া চারটি ক্যাটাগরির বাচ্চাদের শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজি পড়া এবং লেখা যেমন সম্ভব হবে তেমনি প্রথম ক্যাটাগরির বাচ্চারা অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে তাদের শিক্ষার ভিত্তি যেমন মজবুত হবে তেমনি তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে নেতৃত্ববোধ। গত ১৭ আগস্ট উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় রিডিং কম্পিটিশন-২০২২, যেখানে অংশগ্রহণ করে ২০০ শিক্ষার্থী। দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অভূতপূর্ব সাফল্য প্রকৃত অর্থেই প্রশংসার দাবিদার। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় সীমিত কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যতীত পিছিয়ে পড়া ৪টি ক্যাটাগরির সব শিক্ষার্থীর সাবলীলভাবে পড়তে পারার সক্ষমতা লাভ ছিল এই সম্পূর্ণ কার্যক্রমের অর্জন। বর্তমানে কামারখন্দ উপজেলার গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ব্যতীত ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সাবলীলভাবে বাংলা ও ইংরেজি পড়তে পারে, যেখানে মূলত শ্রেণিশিক্ষার পাশাপাশি রিডিং কম্পিটিশন আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাথমিক শিক্ষা সব শিক্ষার বুনিয়াদ। তাই সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আলাদা করে সময় দেয়ার মাধ্যমে তাদের নিয়ে আসতে হবে সামনের সারিতে, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা।

মেরিনা সুলতানা : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App