×

জাতীয়

রাকিনের এমডির ওপর হামলার অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৭:১০ পিএম

রাকিনের এমডির ওপর হামলার অভিযোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

বিদেশি বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্টে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং জোরপূর্বক অফিস দখল করেছে বলে জানা গেছে। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বহিস্কৃত সাবেক এমডির একটি সন্ত্রাসী চক্র।

বুধবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের আবাসন খাতে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই রাজধানীর মিরপুরে ‘রাকিন বিজয় সিটি’ নামে একটি মেগা আবাসন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে, যেখানে দুই হাজার ফ্ল্যাট, কমার্শিয়াল ভবন, কমিউনিটি ক্লাব, হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদ রয়েছে। এছাড়াও কাঁচপুরে ‘রাকিন ট্রাঙ্কুল টাউন’ নামে আরও একটি মেগা আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যেখানে ৫ হাজার ২শ ফ্ল্যাট থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এ কে একরামুজ্জামান নামে একজন বাংলাদেশি পরিচালক। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়, কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি, তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

ফাদি বিতার বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এছাড়া তিনি কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।

এছাড়াও কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোনধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ‘স্টার পোরসেলিন’ নামে একটি কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন একরামুজ্জামান, যিনি একই কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই টাকা ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ৩ আগস্ট তারিখে তাকে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি এই নোটিশের কোন জবাব দেননি।

বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন না থাকা, কোম্পানির কার্যক্রমে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, কোম্পানিতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার কারণে বিগত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে তাকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানান ফিদার।

এই পরিস্থিতিতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে রাশেদুল আলম, আরিফুর রহমান তপন, আবদুল্লাহ কায়সার ও সোহাগ-সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/৩০ জনের বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড-এর রাজধানীর মিরপুরস্থ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্ইুজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোরপূর্বক অফিস দখল করে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, রাশেদুল আলম ও আরিফুর রহমান তপন, ফাদি বিতার ও সুমাইয়া তাসনীনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি বে-আইনি চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তারা ফাদি বিতার ও সুমাইয়া তাসনীনের কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে অফিসের সকল সিসি টিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়।

তারা বলেন, দেশে যদি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কোন নিরাপত্তা না থাকে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও হুমকির মুখে পড়বে। আমরা সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও ঠিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকার পরও সহায়তা করতে গড়িমসি করছে স্থানীয় প্রশাসন।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৩ মে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে আকরামুজ্জামান ও তার ভাই কোম্পানির পরিচালক সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২০১০ সালে দুবাইয়ে আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল এবং থ্রি স্টার নামে দুটি অফশোর কোম্পানি খোলেন। পরে বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ অর্জিত ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাইয়ে পাচার করেন। দুবাইয়ে ওই অর্থ উর্পাজনের কোনো উৎস তারা দেখাতে পারেননি। ওই অর্থ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই। দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে কখনও জানাননি বা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App