×

জাতীয়

রপ্তানির ক্ষেত্রে একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৫ পিএম

রপ্তানির ক্ষেত্রে একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

রপ্তানির ক্ষেত্রে একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বেড়েছে। পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশে না, এর চেয়েও অনেক বেশি দাম বেড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। আমরাও এতে কিছুটা চাপে আছি। আর তাই অর্থনীতির প্রয়োজনে আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আবার এটিও স্থায়ী সমাধান নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংকট স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর উপর বিনিময় হার ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারাই দাম নির্ধারণ করছে। তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় রপ্তানি, রেমিটেন্স বাড়ানোতে জোর দেয়া হয়েছে। তখন আমদানিও বাড়বে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশ অনেক আগ থেকেই একটি পণ্যর উপর নির্ভর করে রপ্তানি বাজার চলে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে ছিল পাট আর এখন তৈরি পোশাক। এই একক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের জন্য আবার ৬০ শতাংশের মতো কাচামাল পণ্য আমদানি করতে হয়। এখন চামড়াসহ যে সব খাতের কাঁচামাল আমদানি করতে হয় না-সেসব খাতের পণ্য রপ্তানিতে জোর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের কোনো ব্র্যান্ড নয়। এটি একটি পণ্য মাত্র, যেখানে বাংলাদেশের লোগো থাকে। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের কোনো পণ্যকে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে হবে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) থেকে অবসরে যাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম। সে হিসেবে মঙ্গলবারই নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার শেষ কর্মদিবস। তার আগে তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১৯৮৮ সালের ২৫ আগস্ট যোগদানকারী মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে ছয় বছর ধরে মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মঙ্গলবার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনটি করেন।

[caption id="attachment_373261" align="aligncenter" width="1511"] বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

মুখপাত্রের দায়িত্বপালনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা সম্মানি বরাদ্দ রয়েছে বেতনের অতিরিক্ত হিসেবে। সিরাজুল ইসলাম দায়িত্বপালনকালে এই সম্মানি গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা দেশ ও মানুষের জন্য তথ্য কর্মী হিসেবে কাজ করে। তাদের সঙ্গে কাজ করাটা অনেক সম্মানের, এর আর্থিক বিনিময় হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার এ চাপ সামাল দিতে বাংলাদেশকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ওপর জোর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স কিছুটা কমছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের পরিমাণও কমছে। এতে রিজার্ভে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। তবে, এ চাপ থাকবে না। কারণ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় দুটোই বাড়বে।বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ডলারের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে। সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৮ থেকে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এতে বাংলাদেশে কোনো নতুন সংকট তৈরি করবে কি না- এ বিষয়ে দৃষ্ঠি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ডলার বিক্রিতে রিজার্ভ কমেছে, এটা সত্য। এটা বাড়বে-কমবে স্বাভাবিক। আবার এক জায়গায় যে রিজার্ভ স্থির রাখতে হবে- এমোন তো নয়। সব খাতেই একটি ভারসাম্যা রাখতে হবে। রিজার্ভ এক সময়ে ৪৮ বিলিয়ন হয়েছিল। সেখান থেকে আবার কমেছে। এটা বুঝতে হবে যে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রাখা হচ্ছে কি-না। বাংলাদেশ ব্যাংক ভারসাম্য রাখছে।

ইইডএফ ফান্ড নিয়ে তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে ইডিএফ ফান্ডে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ঠিক ছিল। এটার টাকা নিয়ে যদি কেউ ফেরত না দেয়, সে বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।

এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেখান থেকে চাকুরি করে অবসরে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপদেষ্টা হওয়াসহ যেকোনো পদবী বা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি করা উচিত নয়। গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অবসরে গিয়ে পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক পদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ দিয়েছেন। এক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কাজ করে অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরি সুবিধা নেয়া আইনি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও নৈতিকভাবে সমর্থন করছেন না আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। এতে অবসরে যাওয়ার আগ থেকেই ওইসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নীতি সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App