×

জাতীয়

মহানবমীতে আজ দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার পালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

মহানবমীতে আজ দেবীকে প্রাণ ভরে দেখার পালা

সোমবার রামকৃষ্ণ মঠে দুর্গাপূজার মহাষ্টমীতে শুরু হয় কুমারী পূজা। ছবি: ভোরের কাগজ

শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ ছড়িয়েছে চারদিকে। টানা দুই বছর করোনা মহামারি ও গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি ভুলে ভক্তরা এবার মেতেছেন দেবী দুর্গার বন্দনায়। মন্দির আর মণ্ডপ প্রাঙ্গণে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল সোমবার মহাষ্টমীর দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঢল নামে ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রাঙ্গণে। এর কারণও আছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়নি অষ্টমী পূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। দুই বছর পর এবার সেই সুযোগ কিছুতেই হারাতে চাননি ভক্তরা। তাই ভোর থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তারা উপস্থিত হয়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কমে এলে ভক্তদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। ভক্তদের ঢল পৌঁছে যায় প্রতিষ্ঠানের মূল গেট পর্যন্ত।

কুমারী পূজা সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুত পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে ৯ জন কুমারীকে পূজা করেন। এর আগে কাশ্মীর ভ্রমণকালে স্বামী বিবেকানন্দ এক মুসলিম মাঝির ৪ বছর বয়সী কন্যা সন্তানকে কুমারীরূপে পূজা করেন। পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। সনাতন শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, কুমারী পূজা ছাড়া দুর্গাপূজায় পরিপূর্ণ ফল লাভ হয় না।

গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশনে গতকাল অষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। বেলা ১১টায় কুমারী দেবীকে আসনে বসানো হয়। এবার কুমারী দেবীরূপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন ছয় বছর বয়সী দেবদৃতা চক্রবর্তী। তার শাস্ত্রীয় নাম ‘উমা’। প্রিয়াংকা চক্রবর্তী ও প্রণয় চক্রবর্তীর মেয়ে দেবদৃতা পড়ছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে। এবার কুমারী পূজা পরিচালনা করেন ব্রহ্মচারী দুর্গাচৈতন্য, তন্ত্রধারী হিসেবে ছিলেন স্বামী স্তবনানন্দ।

শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, ১২তে ভৈরবী, ১৩তে মহালয়ী, ১৪তে পীঠ নায়িকা, ১৫তে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬তে কুমারীকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।

পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রোচ্চারণ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করা হয়। দেবদৃতাকে সিংহাসনে বসানোর সময় অসংখ্য পুণ্যার্থী সমস্বরে ‘দুর্গা মায় কি জয়’, ‘কুমারী মায় কি জয়’ বলে ধ্বনি দিতে থাকেন। কুমারী পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মাকে প্রণাম করেন। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি নিবেদন করেন। পূজা শেষে ভক্তদের আশীর্বাদ দিয়ে দেবদৃতা বলে, ‘আমি আশীর্বাদ করছি, জগতের সবার কল্যাণ হোক, সবার মঙ্গল হোক। পৃথিবীর সব দুঃখ দুর্দশা দূর হয়ে যাক।’

কুমারী পূজার তাৎপর্য প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ বলেন, মানুষ তার কল্পনার জগতকে অতিক্রম করতে পারে না। সে বিভিন্ন মানবীয় ভাবের অবলম্বনেই ঈশ্বর উপাসনা করতে প্রয়াস পায়। বিভিন্ন মানবীয় ভাবের মধ্যে মাতৃভাবে ঈশ্বরের উপাসনা সনাতনধর্মে অতি প্রাচীন। এভাবে উপাসনার মধ্য দিয়ে জগতে বহু সাধক তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। সাধকদের একান্ত বিশ্বাস মাতৃভাবে ঈশ্বরের উপাসনায় চিত্ত দ্রুত শুদ্ধ হয়। কারণ মাতৃভাব সর্বাপেক্ষা আপনজন। আজ অনেক চিন্তাশীল মানুষ অনুভব করছেন, আধুনিক পৃথিবীতে সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট নিরসন করে অগ্রগামী হতে হলে মাতৃজাতির প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। জগতের অনেক স্থানে নারীকে সম্মান দেয়া হয় পতœীরূপে বা সহকারিণীরূপে। কিন্তু নারীর সবচেয়ে মহিমাময় রূপ তার মাতৃরূপ। তাই আজকের এই মহাষ্টমী তিথিতে আমরা জগতের সব মাতৃজাতিকে উদ্দেশ্য করে কুমারী মাতাকে প্রণাম জানাই। তার মাধ্যমে আদ্যাশক্তিকে আমাদের প্রণাম নিবেদন করি।

অষ্টমী পূজা ছাড়াও গতকাল অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। অষ্টমীর শেষ নবমীর শুরুর সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। সন্ধি পূজার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হল পদ্ম। এই পূজায় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্য। সন্ধ্যায় আরতীর সময় ঢাকের তালে নেচেছেন অনেকে।

আজ মঙ্গলবার মহানবমী। আজকের পরেই এত আয়োজন, উচ্ছ্বাস সব পেছনে ফেলে দেবী দুর্গা চলে যাবেন কৈলাশে। ভক্তমনে তাই পড়ছে বিষাদের ছায়া। মহানবমীর পুরোটা দিন দেবীকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়া, ভক্তি দিয়ে দেবীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকবেন ভক্তরা। মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা ছাড়াও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা। আজ মণ্ডপে মণ্ডপে প্রধান আকর্ষণ থাকবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। একইসঙ্গে দিনভর চলবে চণ্ডীপাঠ। থাকবে ভক্তদের কীর্তনবন্দনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App