×

অর্থনীতি

বিলোনিয়া স্থলবন্দরে ভারতের সঙ্গে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৫৩ এএম

বিলোনিয়া স্থলবন্দরে ভারতের সঙ্গে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু

ছবি: ভোরের কাগজ

দীর্ঘ এক যুগ পর ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্যের অংশ হিসেবে আমদানি চালু হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় বার বছর শুধু রপ্তানি চালু ছিল। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ। আমদানি চালু হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে উচ্ছ্বাস।

এ স্টেশন দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতির জন্য সব আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টদের বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে আরো বড় পরিসরে আমদানি-রপ্তানির জন্য এবং সব ধরনের পণ্য আমদানি করার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার (কুমিল্লা)।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিলোনিয়া স্থলবন্দর ঘোষণা দেয়া হয়। স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, গুদামঘর, তিনতলা অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখন চালুর অপেক্ষায় আছে। আগে থেকেই এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে কার্যকর ছিল।

বিলোনিয়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশন এক সম্ভাবনাময় কাস্টমস স্টেশন। বিলোনিয়া স্থলবন্দর থেকে পরিবহন উপযোগী সুপরিসর রাস্তা নির্মিত হয়েছে। বিলোনিয়ায় কাস্টমসের বড় স্থাপনা ও পর্যাপ্ত জমি রয়েছে।

এ ব্যাপারে আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফের সভাপতি ও কুমিল্লা চেম্বার এন্ড কমার্সের সহসভাপতি জামাল আহমেদ ভোরের কাগজকে জানান, এ বন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতির দাবি দীর্ঘদিনের। তিনি জানান, ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালুর পর থেকে একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল। বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ফেনীর বিলোনিয়া শুল্কবন্দর ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়।

ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড, রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। অন্যদিকে ভারত থেকে মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল। স্থলবন্দরটিতে বর্তমানে একজন ল্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তা, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

বিলোনিয়ার ব্যবসায়ী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, সরকারের স্বদিচ্ছা সত্ত্বেও নানান জটিলতায় প্রায় এক যুগ আমদানি বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে হঠাৎ কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও এতে সাড়া দিয়েছেন। এর মধ্যে ফেনীর ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিনের পেঁয়াজের একটি চালান এসেছে। প্রায় ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চললেও বন্দরে কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। তাই ব্যবসায়ীদের ফেনীতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সই করিয়ে আনতে হয়।

আমদানি ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়।

ব্যবসায়ীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, বিলোনিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডও (বিজিবি) বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাক আটকে রাখে।

আমদানিকারকরা জানান, অবকাঠামোর দিক থেকে এ স্থলবন্দর পূর্ণতা অর্জন করতে পারলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য তেমন আগ্রহী হয়ে উঠছে না।

বিলোনিয়া স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম জানান, দ্বিমুখী বাণিজ্যের কথা শুনে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। দ্বিমুখী বাণিজ্য শুরু হলে বন্দর পূর্ণতা পাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিলোনিয়া ল্যান্ড কাস্টমসের রাজস্ব অফিসার মো. আল আমিন ভোরের কাগজকে জানান, উদ্বোধনের পর থেকে ভারতে ইট, সিমেন্ট, পাথর, শুঁটকি রপ্তানি করে এতে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আমদানি পুরোদমে চললে বছরে আরো ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতে পারে।

তিনি আরো জানান, ভারতের বিলোনিয়া কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাধার কারণে সেই দেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। যাত্রীদের ভ্রমণ কর জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকের একটি শাখা প্রয়োজন। আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পূর্ণাঙ্গ অবকাঠানো এখনো স্থাপিত হয়নি, জনবল সংকটও আছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেছি। তবে ইতোমধ্যে বন্দরের কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App