×

জাতীয়

সাংবাদিক তোয়াব খানকে শেষ বিদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৭:০৮ পিএম

সাংবাদিক তোয়াব খানকে শেষ বিদায়

বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক তোয়াব খানের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা

সাংবাদিক তোয়াব খানকে শেষ বিদায়

বনানী কবরস্থানে দাফন

তার বিদায় বেলায় প্রকৃতিও কাঁদছিল। দূরে কোথাও হয়তো টুপটাপ ঝরছিল কষ্টের বকুল। এমন বৃষ্টিস্নাত সকালেই একুশে পদক পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক তোয়াব খানের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানাতে তোয়াব খানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে প্রথমে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

এরপর রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তার সহকারী সামরিক সচিব সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব জিএম রাজীব আহমেদ। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেত্যুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়, এ সময় কাদেরের সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।

পরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপ-সচিব আসাদুজ্জামান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, কুমিল্লার কাগজ, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তোয়াব খানকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে সকাল ১০টায় তোয়াব খানের মরদেহ তেজগাঁওয়ে দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলার কার্যালয়ে নেয়া হয়, সেখানে সম্পন্ন হয় প্রথম নামাজে জানাজা।

শহীদ মিনারে তোয়াব খানের ভাই সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আমার প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে তোয়াব খানকে শুধু একটি দিনে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে নয়, তার কর্মের ভিতর দিয়ে তাকে আবিষ্কার করতে হবে, গ্রহণ করতে হবে এবং ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ এক দিকে তাকিয়ে আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলণ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। একটি বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা আসছে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার সময় এখনই।

আওয়ামী লীগের পক্ষে তোয়াব খানের কফিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার মৃত্যুতে আমাদের সংবাদপত্র জগতে এক বিশাল বটবৃক্ষের পতন হল।

কাদের বলেন, তিনি নীরবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনও হাঁকডাক করতেন না, নেতাগিরি করতেন না। তিনি সাংবাদিকতায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এই একাত্তরের শব্দ সৈনিক, বায়ান্নের ভাষা সৈনিক এবং বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিবকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক পছন্দ করতেন। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেয়া হলে তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনসহ নেতৃবৃন্দ।

এ সময় ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাব এডিটর্স কাউন্সিল (ডিএসইসি), প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রে, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠন।

ড. হাছান বলেন, তোয়াব খান বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন কিংবদন্তী সাংবাদিক। তার হাত ধরে বাংলাদেশের বহু প্রথিতযশা সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। তার লেখনী আমাদের দেশ ও জাতিকে উপকৃত করেছে। তিনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একজন পথিকৃত। তার মৃত্যু আমাদের সাংবাদিকতা জগতের জন্য শুধু নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

মন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অসামান্য অবদান ছিল। স্বাধীন বাংলার সঙ্গে কাজ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা রেখেছেন। তোয়াব খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃত ছিলেন তোয়াব খান। আমি মনে করি তিনি যে দেশপ্রেম ও আদর্শ নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন, এখন যারা সাংবাদিকতা করছেন, আগামীতে যারা এই পেশায় আসবেন, তারাও সেই আদর্শ গ্রহণ করবেন ও স্মরণে রাখবেন।

তোয়াব খানের ছোট ভাই ওবায়দুল কবির খান বলেন, আমার বড় ভাই মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি তিনি কখনও আপনাদের সঙ্গে কখনও ভুল ব্যবহার বা অন্য কোনও কিছু করে থাকেন, তবে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। একই সঙ্গে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া রাখবেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আজ আমরা শোকে ভারাক্রান্ত। আমাদের সঙ্গে হয়তো প্রকৃতিও আজ কাঁদছে। তার মৃত্যুতে সাংবাদিকতা আজ শূন্যস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে। তোয়াব ভাইয়ের চলে যাওয়া মানে সাংবাদিকতার একটি ইতিহাসের অধ্যায় শেষ হওয়া।

জানাজা শেষে তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ সাব এডিটর্স কাউন্সিল (ডিএসইসি), দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রে, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠন।

প্রেস ক্লাবে নামাজে জানাজা শেষে তোয়াব খানের মরদেহ গুলশানের আজাদ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে আসর নামাজের পর তাকে বনানী কবরস্থানে মেয়ে এশা খানের কবরে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, শনিবার (১ অক্টোবর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App