×

মুক্তচিন্তা

পদোন্নতি যেন সোনার হরিণ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১২:৩১ এএম

এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি দীর্ঘকাল ধরে অনুপাত প্রথার (৫:২) জালে আটকা পড়েছিল। এমনই এক প্রথা ছিল যে প্রথার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষককেই সমগ্র চাকরিজীবনে প্রভাষক হিসেবে থাকতে হয়েছে এবং প্রভাষক হিসেবেই অবসর গ্রহণ করতে হয়েছে। এই অনুপাত প্রথা থেকে শিক্ষকরা মুক্তি পেলেও আরেক ধরনের নব-সংকট তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ২০২১ (২৮ মার্চ প্রকাশিত) অনুযায়ী অনুপাত প্রথা তুলে দিয়ে এমপিওভুক্ত মোট প্রভাষকের ৫০ শতাংশকে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ পদোন্নতিকে আবার দুটি পর্যায়ে নামকরণ করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে প্রভাষক থেকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এবং ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক। পদোন্নতির এমন নামকরণ মনঃকষ্টের একটি বড় কারণ। একই সুযোগ-সুবিধা থাকবে অর্থাৎ ষষ্ঠ গ্রেডে উভয়ই বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাবে, শুধু নামের বেলায় একজন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আর অন্যজন সহকারী অধ্যাপক। নীতিমালা করা হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। সেখানে বলা হয়েছে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রভাষকদের পদোন্নতি নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে। নীতিমালার ১১.৪ ধারায় বলা হয়েছে ৮ বছর চাকরির সন্তোষজনক পূর্তিতে মোট প্রভাষকের ৫০ শতাংশ পদোন্নতি পাবেন অর্থাৎ কোনো একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে যদি ১২ জন এমপিওভুক্ত প্রভাষক থাকেন তবে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ৬ জন পদোন্নতি (৬ গ্রেড)/জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হবেন। ডিগ্রি কলেজেও ঠিক একই নিয়ম। শুধু জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের স্থলে সহকারী অধ্যাপক প্রাপ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের একটি মূল্যায়ন পর্ব রাখা হয়েছে। চাকরির বয়স, দক্ষতা, সৃজনশীল কাজ, গবেষণা, কোনো মামলা না থাকা, একাডেমিক রেজাল্ট, ক্লাসে উপস্থিতিসহ আরো কিছু শর্ত। সবই ঠিক আছে। শিক্ষকরাও চান তারা তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে পদোন্নতি হোক। ১০০ নম্বরের এই মূল্যায়নের কাজটি করবে একটি কমিটি। কিন্তু আমাদের উদ্বেগের জায়গাটি হলো যোগ্যতা নির্ধারণ সূচকের অপব্যবহার নিয়ে। সূচকের যে মানদণ্ডগুলো দেয়া হয়েছে সেটার অপব্যবহার করে জুনিয়রকে বাইপাস করে সিনিয়র বানানো সম্ভব। বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি সমগ্র চাকরি জীবনে একবার। সেক্ষেত্রে সিনিয়রিটি বজায় থাকা অত্যাবশ্যক। সূচকের যে কয়টি ক্যাটাগরিতে নম্বর রাখা হয়েছে তা খুব একটা যৌক্তিক মনে হয়নি। কেননা কোনো শিক্ষক অনেক সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও যদি গভর্নিং বডির সুনজরে না থাকতে পারেন তবে সে সিনিয়রিটি নির্ধারণের যোগ্যতায় পিছিয়ে পড়বেন। সিনিয়র হয়েও সে পদোন্নতি থেকে ছিটকে পড়বেন এবং তার জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়ে যাবেন। আর এমনটি হলে সেটা হবে একটি বুমেরাং। চরম অস্বস্তি বিরাজ করবে শিক্ষকদের মধ্যে। তাই বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়রিটিকেই মুখ্য ধরতে হবে। যিনি যোগদানে এবং এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে এগিয়ে থাকবেন তাকেই সিনিয়র বলতে হবে। যাদের ১৬ বছর হয়ে গেছে তারা যেন ঝামেলা ছাড়াই পদোন্নতি পান সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে পদোন্নতি কোনো করুণা নয়, এটা চাকরিজীবীদের একটি অধিকার। বর্তমানে ২ হাজার ৫২৪টি উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। আর এত কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতি একটি কমিটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা কতটুকু সম্ভব হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। যাহোক কমিটি যদি দ্রুত কাজ শুরু করে তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। জানা গেছে, এক্ষেত্রে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে কাজকে সহজ করা হবে। দেশ আজ উন্নয়নের এক রোল মডেল। সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে প্রেস ক্লাবে প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্যটুকু বুঝে পেলে শ্রেণিকক্ষেই নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন। জাতি গড়ার এই কারিগরদের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু যেন যথাসময়ে নিশ্চিত করা হয় সেটাই হোক আমাদের ব্রত।

মাজহার মান্নান : সহকারী অধ্যাপক, বি এ এফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App