×

জাতীয়

একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৬:২৫ পিএম

একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

ফাইল ছবি

১৯৭১’এর গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে ৯ দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। সোমবার (৩ অক্টোবর) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ২৫ নম্বর কক্ষে আলোচনা, প্রতিবাদ ও বাংলাদেশ গণহত্যা বিষয়ক ভিডিও প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর পর হলেও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ৫১তম সভার আলোচ্যসূচির ৩ নং এজেন্ডায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার বিষয়টি স্থান পেয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ৫১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ গণহত্যা ইস্যুটি নিয়ে জোরালো আলোচনার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা একাত্তর, প্রজন্ম একাত্তর, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (ইবিএফ) ও নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বাসুগ) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নয় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।

এ উপলক্ষ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ, আলোচনা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পোস্টার প্রদর্শন, জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনে স্মারকলিপি দেয়াসহ দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পরিচালিত হয়েছে।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুরের নালিতাবাড়ির বিধবা পল্লী, বরিশাল, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারে এসব কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্ক, ইংল্যান্ড, টরোন্টো, সিডনি ও অস্ট্রেলিয়াতে মানববন্ধন, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব কর্মসূচি আয়োজনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা সংগঠন আমরা একত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী হিলাল ফয়েজী বলেন, বাংলাদেশ গণহত্যারর বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, উত্তরবঙ্গ জাদুঘর, আমরা একাত্তর, প্রজন্ম একাত্তর, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (ইবিএফ) ও নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বাসুগ) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।

এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সংঘটিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জেনোসাইড নিয়ে আলোচ্যসূচি থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে সে আলোচনা ওই অধিবেশনে উত্থাপিত হতে পারেনি। বাসুগএই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে উপাচার্যের উপস্থিতিতে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির সক্রিয় অংশগ্রহণে গণহত্যা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

হিলাল ফয়েজী বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের পথে এসব কর্মসূচি আরেকটি ধাপ। জাতিসংঘের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি জানান,দাবি আদায়ের আন্দোলনে পররাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সক্রিয় সহযোগিতা করছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশ গণহত্যার আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ে পররাষ্ট্র সচিবকে আহ্বায়ক করে সরকার এবং দেশ-বিদেশে আন্দোলনরত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে কমিটি করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “এ দাবি আদায়ে সরকারকে এ্যাগ্রেসিভ ডিপ্লোমেসি এবং সমন্বিত ও সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষেই এটি সম্ভব।”

শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জাতিসংঘের কাছে ২৫ মার্চ নয়, পুরো নয় মাসের গণহত্যার স্বীকৃতি চাই। এ স্বীকৃতি আদায় করতে হলে বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে প্রথমে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর কাছে চিঠি দিতে হবে।

তিনি সরকারকে প্রথম ভারতসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, আগে আমাদের দাবির পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে হবে। তবেই এটা জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের পথ প্রশস্ত করবে।

আগামী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সামনে সমাবেশ আয়োজন ও স্মারকলিপি দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুণ হাবীব আজ বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জেনেভা কার্যালয়ে বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে আজকের আয়োজনের সুযোগটিকে আমরা একটা বড় অগ্রগতি বলে মনে করি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ গণহত্যার আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ স্বীকৃতিকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। এ জন্য দেশে ও বিদেশে এ বিষয়ে কর্মরত সকল সংগঠনকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে জাতিসংঘ যথাশিঘ্রই আমাদের দাবিকে স্বীকৃতি দেয় এবং সুবিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করে।

তিনি আরও জানান, এ দাবির সমর্থনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে সমাবেশ, সেমিনার, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

হারুণ হাবীব জানান, জাতিসংঘের স্বীকৃতির দাবিতে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম শিগগিরই সকল সংগঠনের অংশগ্রহণে একটি আলোচনার আয়োজন করতে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ৫১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ জেনোসাইড ইস্যুটি নিয়ে জোরালো আলোচনার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নয় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেল টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন চত্বরে আলোচনা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ভিডিও প্রদর্শন ও জাতিসংঘের কাছে প্রতীকী চিঠি প্রেরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। সূত্র: বাসস

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App