×

জাতীয়

শেষ হচ্ছে করোনা টিকাদান: বাদ পড়াদের কী হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪২ পিএম

শুরুর দিকে করোনা টিকায় মানুষের আগ্রহ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় এতে ভাটা পড়েছে। বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সরকার দেশব্যাপী কয়েক দফা বিশেষ ক্যাম্পেইনও করে। সে সময় জনগণের সাড়া পেলেও এখনো দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি। জুলাই মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, পৃথিবীর খুব কম দেশেই বিনামূল্যে টিকা দেয়া হয়। আমরা দোকান খুলে বসে আছি, যে দোকানে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হয়। কিন্তু ক্রেতা নেই।

এদিকে মজুতকৃত কয়েক কোটি ডোজ টিকার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। আরো কয়েক কোটি টিকার মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মজুতকৃত টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই সরকার ৩ অক্টোবরের পর টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাদ পড়া জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী চলছে টিকাদান কার্যক্রম। এরপরও যারা টিকার বাইরে থাকবেন, তাদের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কী হবে- এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ৩ অক্টোবরের পর বিকল্প কিছুই থাকবে না। ক্যাম্পেইনগুলোও থাকবে না। যারা অসুস্থতাসহ যৌক্তিক কারণে টিকা নিতে পারেননি, তাদের আমরা টিকা দেব। তবে তাকে কেন্দ্রে আসতে হবে। তিনি কী কারণে টিকা নিতে পারেননি তার যৌক্তিক প্রমাণ দেখাতে হবে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ এখনো টিকা পায়নি। অনেকে চেয়েও পাচ্ছে না। টাকা থাকার পরও টিকা কিনতে পারেনি। আমরা টিকা ক্রয় করেছি। কিন্তু মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ টিকা নিচ্ছেন না। কিংবা বিশেষ কোনো কারণে টিকা নিতে পারেননি। টিকার মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হলে টিকাটি নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা টিকাগুলো ক্রয় করেছি। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে টিকা পাব কোথায়? যারা সময়মতো টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিলো না তাকে যদি পরে আমি টিকা দেই তাহলে যে লোকটি বুস্টার ডোজ পাওয়ার কথা তিনি সেটি পাবেন না।

চলমান টিকাদান কর্মসূচির মধ্য দিয়েই বাদ পড়া বিশাল জনগোষ্ঠী প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আসবে আশা প্রকাশ করে ডা. শামসুল হক বলেন, আমার মনে হয়, এবার আমাদের টার্গেট পূরণ হয়ে যাবে। যে লোকটি ১২ বছরে পা দেবে, তাকেও আমরা টিকা দেব। সমস্যা হবে না। কিন্তু আমি বলব এখনো সময় আছে, যারা টিকা নেননি তারা যেন টিকা নিয়ে নেন। এখন সরকার টিকা নিয়ে বাড়ির কাছে যাচ্ছে। কিন্তু তখন তাকে দূরে টিকাকেন্দ্রে আসতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এলেই তাতে সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়। কিন্তু যে লোকটি টিকা নিলো না তার জন্য তো সুরক্ষা নিশ্চিত হলো না।

জনগণকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার আমাদের একটি সুযোগ দিয়েছে। জনগণ হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। পরিচিত আত্মীয়-স্বজন যারা টিকার বাইরে রয়েছেন তাদের টিকা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নীতিগত ভুলের কারণেই টিকা নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশের ৪০ শতাংশ মানুষও যখন বুস্টার ডোজের আওতায় আসেনি তখনই সরকার ৫ বছর ঊর্ধ্ব শিশুদের টিকা কার্যক্রম শুরু করে। অথচ বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয়, কোভিড-এ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হচ্ছে বয়স্ক লোকজন। শিশুদের টিকাও জরুরি তবে সরকারকে প্রাধান্য নির্ধারণ করতে হবে। শিশুদের টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বুস্টার ক্যাম্পেইন বাতিল করে সরকার। কারণ শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে মনযোগ দিতে হয়েছে।

৩ অক্টোবরের পর করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা বন্ধ কতটা যৌক্তিক- এ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার টিকা নিয়ে বেশ কিছু ঝামেলায় পড়েছে। চীন থেকে যে সিনোফার্মার টিকা আনা হয়েছিল; এর প্রায় ১০ কোটি টিকার মধ্যে কিছু টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে; আর কিছু টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি। এই টিকা চীন ফেরত নিতে চায়নি এমনকি টাকাও ফেরত দিতে রাজি হয়নি। বিনামূল্যে ওই টিকা ইন্দোনেশিয়াকেও নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার। তারা টিকার পাশাপাশি টিকা বহনের খরচও দাবি করে। মিয়ানমারকেও টিকা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তারাও টিকা নেয়নি। ওই টিকাগুলো নষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত কিছু সমস্যা যেমন আছে; তেমনি সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় মানুষের মধ্যে অনাগ্রহও তৈরি হয়েছে। সরকার আমাদের একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। নিজের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে নিজেকেই আগ্রহী হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App