শিশু ধর্ষণ বেড়েছে : প্রতিরোধে রাষ্ট্রের কঠোর ভূমিকা দরকার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০১:৩৮ এএম
দেশে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা বেড়েছে। শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটছে। এর বেশির ভাগই রাস্তায়, নিজ বাসায় ও স্বজনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার। ঘরকেই সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অনেক নারী ও কন্যাশিশুর জন্য ঘরও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। গত শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২’ প্রকাশ করে। ২০২২ সালের প্রথম ৮ মাসে দেশের ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে এ ফোরাম। প্রতিবেদনে বলা হযেছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫৭৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮৪ ও ৪৩ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলছে, ধর্ষণের ঘটনার পর আইনি পদক্ষেপ নেয়া হলেও অনেকেই জামিনে মুক্ত হয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। চূড়ান্ত শাস্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় ২ হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে ২৮৮ কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এ সময় ৫৮৯টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে। এ চিত্রটি ভয়াবহ। এটি শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ। এর বাইরে অনেক ঘটনা অগোচরে রয়ে যাচ্ছে। ধর্ষণ সামাজিকভাবে একটি চরম ঘৃণ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি পাপ কাজ, অন্যদিকে দেশের আইনেও ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এত বাধা থাকার পরও কেন ধর্ষণের বীভৎসতা বেড়েই চলেছে- এটাই প্রশ্ন। বলা হয়ে থাকে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ভিকটিমরা দুর্বল বলে অপরাধীরা বিচার ও শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। যে কোনো বয়সের নারী শিশুকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ধর্ষণ-সংক্রান্ত আইনটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্র যদি কঠোরতা না দেখায় তবে সমাজে ক্ষতের গভীরতা বাড়তে থাকবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ-সামাজিক নৈতিকতাও ধর্ষণের মতো বিকৃতি থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না। এসব নিয়েও ভাবা দরকার। ধর্ষণ প্রতিরোধে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম কিছু উল্লেখযোগ্য সুপারিশ দেয়। সুপারিশগুলো হলো- শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচার করা, অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই অভিযোগ প্রমাণের দায়, কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় বন্ধ করা, শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর, বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরদারি বৃদ্ধি, সাইবার সচেতনতা বাড়ানো, আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো আমলে নিতে পারে। আমরা মনে করি, নারী শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে সরকার ও সরকারি দল যদি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এবং কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করা যায়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ কমবে। সব ধর্ষণ মামলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গণমাধ্যমসহ অন্যদের সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে।