×

আন্তর্জাতিক

ভয়াবহ পথে ইউক্রেন যুদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৬ এএম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনোই কোনো দেশ অন্য একটি দেশের এত বড় অংশ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেনি। ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিশেষ সামরিক অভিযানে এক লাখ ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি এবং প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হাতছাড়া হয়েছে ইউক্রেনের। সেখানে এখন রাশিয়ার পতাকা উড়বে। গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ৪টি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণায় যুদ্ধের গতিপথ ভয়াবহতার দিকে মোড় নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পরিবর্তিত এই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনই তাড়াহুড়া করে একটি খসড়া নিন্দাপ্রস্তাব তোলা হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। তবে এই নিন্দাপ্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে রশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত ও চীন। রাশিয়া এ প্রস্তাবে ভেটো দেয়ায় তা বাতিল হয়ে যায়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড স্থানীয় সময় গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং আলবেনিয়ার যৌথভাবে করা এ নিন্দাপ্রস্তাবে ইউক্রেনের রুশ দখলকৃত অংশে অনুষ্ঠিত গণভোটের নিন্দা এবং সব রাষ্ট্রের প্রতি ইউক্রেনের সীমানায় কোনো পরিবর্তনের স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১০টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। তবে ভোটদানে বিরত থাকে চীন, গ্যাবন, ভারত এবং ব্রাজিল।

এ সময় মস্কো-ইইউ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভাঙনে কারা লাভবান হচ্ছে- রাশিয়ার প্রতিনিধি সেই প্রশ্ন করলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তা এড়িয়ে যান। এদিকে ফ্রান্স ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়াবে ও রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞা কঠোর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে ছিদ্র করার ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা। আর এখন রাশিয়া এ নিয়ে ভুল তথ্য ও মিথ্যায় হাওয়া দিচ্ছে।

আলোচনার নতুন খেলা: পুতিন অবশ্য শুক্রবারের সংযুক্তির পরেই ঘোষণা দেন তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার স্থান হিসেবে বেলারুশের গোমেলকে প্রস্তাব করেন। এর পাল্টা জবাবে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার নতুন কোনো প্রেসিডেন্ট ছাড়া তিনি শান্তি আলোচনায় বসবেন না। ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ নতুন অঞ্চল যুক্ত হওয়াকে অধিগ্রহণ ও আলোচনার প্রস্তাবকে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে গুরুতর ধাপ বলেছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত শুক্রবার তার বক্তব্যে বলেন, খেরসন, জাপোরিঝিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক তাদের জনগণ ও মাতৃভূমির সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি এসব এলাকায় অনুষ্ঠিত গণভোটের বিষয় উল্লেখ করেন। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব এই গণভোটকে ভাওতাবাজি বলেছে।

এদিন ইউক্রেনের ৪ অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেয়ার অনুষ্ঠানে ৬৯ বছর বয়সি পুতিনকে ইউক্রেনের মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হাত মুঠোতে নিয়ে ‘রাশিয়া, রাশিয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নতুন যুক্ত হওয়া অংশগুলো পরিচালনায় এ নেতাদের ওপরই ভরসা করছেন।

ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিককেন্দ্রের প্রধানকে ‘অপহরণ’: ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায় অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিককেন্দ্রের প্রধানকে অপহরণ করেছে রাশিয়া। কিয়েভের পারমাণবিককেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে কেন্দ্রের মহাপরিচালক ইহোর মুরাশভকে আটক করেছে রুশ বাহিনী। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া, খেরসন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে মস্কোর সঙ্গে সংযুক্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর অপহৃত হন তিনি। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কোম্পানি এনারগোটমের প্রেসিডেন্ট পেট্রো কোটিন বলেন, ‘ইহোর মুরাশভেরর গাড়ি থামিয়ে চোখ বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় রুশ সেনারা। রাশিয়া তাকে আটক করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে।’

তবে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিচালককে অপহরণ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি মস্কোর। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নামার পর জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এক পর্যায়ে নিজেদের দখলে নেয়। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা নেতারা স্পর্শকাতর কেন্দ্রটি থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে দূরে থাকার আহ্বান জানালেও তাতে কাজ হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App