×

জাতীয়

জিয়ার কবর সরাতে আল্টিমেটাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০১ পিএম

জিয়ার কবর সরাতে আল্টিমেটাম

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণ ও তার মরণোত্তর বিচার করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন। রোববার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে সংগঠনটি আয়োজিত ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর কারাদন্ডপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত এবং ফাঁসি দেওয়া সদস্যদের স্বজনরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম দেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফাঁসি হওয়া বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট আবুল বাশার খানের মেয়ে বিলকিস বেগম। সংগঠনের নেতারা বলেন, কবর অপসারণ করা না হলে আগামী ১ ডিসেম্বরে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের সদস্যরা জিয়ার কবর অপসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করবে।

মায়ের কান্না সংগঠনের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন বলেন, একটি চিঠি দিয়ে আমার মাকে জানানো হয়েছিল আপনার স্বামীকে মারা হয়েছে। শুধু চিঠি পেয়েছি কিন্তু লাশ পাইনি। রাতের আধারে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু আজও আমরা আমাদের বাবাদের বিচার ও লাশ শনাক্ত করতে পারিনি।

কর্পোরাল মোবারক আলীর সন্তান মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছয় মাস বয়সে বাবাকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান। আমাদের বাবার মরদেহ কোথায় আমরা তা জানি না। কোন অপরাধে তাদের ফাঁসি দিলো খুনি জিয়া সেটাও জানি না। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার বাবার দাফনের স্থান কোথায় সেটা জানতে চাই? আমাদের মায়ের কান্না দেখেই বড় হয়েছি পিতৃহীন হয়ে, অনাদরে অবহেলায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বাবারা দেশকে স্বাধীন করতে শুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। অথচ আমরা জানি না কোথায় তাদের কবর? কেন তাদের হত্যা করা হলো এই স্বাধীন বাংলাদেশে?

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে জাপান রেড আর্মির সদস্যরা জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে। সেই বিমানটি জোরপূর্বক ঢাকা বিমান বন্দরে (পুরাতন তেজগাঁও বিমান বন্দরে) অবতরণ করায়। বিমান ছিনতাই এবং যাত্রী জিম্মির ঘটনায় ঢাকা সেনানিবাস এবং বিমানবন্দর এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর বিমান ছিনতাই ঘটনার অবসান ঘটে। কিন্তু সুযোগ বুঝে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সৈনিক ব্যারাকে বিদ্রোহের সূত্রপাত করান। কারণ তিনি বিমান বাহিনীকে সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মীকরণ করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিলেন।

সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন না বিমান বাহিনীর তৎকালীন সদস্যরা। জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার সুযোগে জিয়া কিছু সৈনিককে লেলিয়ে দিয়ে বিমান বাহিনীর ১১ জন অফিসারকে গুলি করে হত্যা করায়। এই ঘটনাকে পুঁজি করে বিদ্রোহ দমনের নামে নির্বিচারে বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের গ্রেপ্তার ও গুম শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের আগে ফাঁসি কার্যকর করে, পরে কোর্ট মার্শালে বিচার করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর শুরু হয় ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর। অথচ বিদ্রোহ দমনের বিচার কাজের আইন পাস হয় ১৪ অক্টোবর। জিয়া ঘোষিত মার্শাল ল’ ট্রাইব্যুনাল গুলোতে বিচার প্রহসনের সময় একজন সৈনিকেরা জীবন মরণের সিদ্ধান্ত নিতে গড়ে ১ মিনিটের চেয়েও কম সময় দিয়েছিলেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল প্রধানরা।

পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ১২১ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। কুমিল্লা কারাগারে ৭২ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। বগুড়া কারাগারে ১৬ জন, রংপুরে ৭ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু বিমান বাহিনী সদর দপ্তরের হিসেবে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে ৫৬১ জন সৈনিক নিখোঁজ হয়েছেন। যাদের কখনই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ঠিক একই সময়ে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ২২ বেঙ্গল বিদ্রোহ করলে জিয়া পুরো ইউনিটের সদস্যদের গুম করে দেয়। যাদের সংখ্যা দুই শতাধিক। সেনাবাহিনীর গুম হওয়া সদস্যদের বেশিরভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধা। যাদের ফাঁসিতে নয় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল জিয়া।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের কান্নার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো...

১) ফাঁসি হওয়া সদস্যদের কোথায় সমাহিত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই স্থান চিহ্নিত করে দিতে হবে

২) অন্যায়ভাবে ফাঁসি হওয়া সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করা এবং শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩) নিহত সদস্যদের স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র‍্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন ও সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪) জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

৫) জিয়াউর রহমানের কবর জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায়, আগামী ১ ডিসেম্বর মায়ের কান্না সংগঠনের সদস্যরা কবর অপসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App