চট্টগ্রামে মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সব ধর্মের মানুষ এ উৎসবে যোগ দেন। আর তাই পূজামণ্ডপগুলোতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল। গতকাল শনিবার ষষ্ঠীতে বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। উলুধ্বনি, ঢাক-ঢোল, বাদ্যি-বাজনা আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন সম্পন্ন হয়। বন্দরনগরীর মণ্ডপে মণ্ডপে বিভিন্ন ‘থিম’ লক্ষ্যণীয়। সাম্প্রতিক সময়ে সমাজের নানা অসঙ্গতি এসব ‘থিমের’ মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে নগরীর ছোট-বড় অধিকাংশ পূজামণ্ডপে। সব অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় কামনা করা হয়েছে প্রতিমা, বর্ণিল আলোকসজ্জা, ডেকোরেশন এবং আলোকায়নের মাধ্যমে।

নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদ এবার শারদীয় দুর্গোৎসবের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। দুর্গোৎসবের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে এবার পূজার থিম- ‘পার্বণ’। আদিবাসীদের জীবনধারা তুলে ধরা হয়েছে এর মাধ্যমে। বাঁশ ও বেড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজামণ্ডপ। মণ্ডপে প্রায় ১৪ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন এই পূজামণ্ডপ দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। গতকাল শনিবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠীর দিন বিকালে দক্ষিণ নালাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদ সভাপতি অসিত সেন ও সাধারণ সম্পাদক রানা বিশ্বাসের নেতৃত্বে বের করা হয় এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি। ব্যানার, প্লেকার্ড, ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বের হওয়া র‌্যালিটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। এ সময় তিনি ৭৫টি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পূজা পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক পংকজ বৈদ্য সুজন, মহানগর জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সজল চৌধুরী, রঞ্জন সাহা, সৌমেন দে ও সোহেন দে।

এ সময় পূজামণ্ডপের থিম পরিকল্পনাকারী রাজিব বিশ্বাস রাজা বলেন, এবার পূজার থিম হচ্ছে ‘পার্বণ’। আদিবাসীদের জীবনধারা ও কর্মযজ্ঞ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। বাঁশ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজামণ্ডপকে। মণ্ডপে প্রায় ১৪ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ভাবনা ও সৃজনে রয়েছেন বিশ্বজিৎ আইচ। পাঁচ মাস আগে থেকে আমরা এ কাজ শুরু করেছিলাম। দিন-রাত কাজ চালিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পেরে ভালো লাগছে। আশা করছি দর্শনার্থীদেরও কাছে আমাদের এই আয়োজন দৃষ্টিনন্দন হবে।

পূজা পরিষদের সভাপতি অসিত সেন বলেন, ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ নালাপাড়ায় পূজা আয়োজনের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজন রয়েছে। এর আগে আমরা ৫০ বছর পূর্তি উৎসবও করেছিলাম। প্রতিবছর এই পূজামণ্ডপে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আশা করি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে এবারের আয়োজন। আমি এবারের দুর্গোৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উপস্থিতি ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।