×

সারাদেশ

কুবিতে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম

কুবিতে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক একাংশের নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসে শোডাউন। ছবি: ভোরের কাগজ

কুবিতে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক একাংশের নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসে শোডাউন। ছবি: ভোরের কাগজ

কুবিতে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে একাংশের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসে শোডাউন। ছবি: ভোরের কাগজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা এলাহির নেতৃত্বে মোটরবাইক শোডাউন, ককটল বিস্ফোরণ, ফাঁকাগুলি ছুড়েছে বহিরাগতরা। শনিবার (১ অক্টোবর) দুপুর ৩টায় প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শোডাউন দেয়। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান করে ককটল বিস্ফোরণ এবং ফাঁকাগুলি ছোড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শোডাউন করেন বহিরাগতরা। এ সময় তারা শহীদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থান নেন। এবং হলের দিকে ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

এ সময় তারা বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের (২০১৭ সালের কমিটি) অনুসারীদের বের হয়ে আসতে বলেন। পরে সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হলের নিচে থাকা সাইকেল ভাঙচুর করেন। প্রায় ২০ মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থান করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দীকী ও হল প্রভোস্টরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে ইলিয়াসের অনুসারীরা তাদেরকে প্রতিহত করতে গেলে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

[caption id="attachment_372501" align="alignnone" width="1386"] কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে একাংশের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসে শোডাউন। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এসময় বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ইলিয়াসের অনুসারীদের রামদা, হকিস্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা যায়। প্রধান ফটকের সামনে এসে তারা বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা না দেয়ার প্রক্টরের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহী জানান, কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে আমরা আনন্দ মিছিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিল। সেখানে বহিরাগতরা থাকতেই পারে। বিষয়টি আমি অবগত নয়।

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রক্টরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সোহান তালুকদার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে ওরা আসবে এটা প্রক্টরিয়াল টিম কিভাবে জানলো? এটা তো পূর্বপরিকল্পিত। ক্যাম্পাসে পুলিশ থাকার পরেও একটা গ্রুপ কিভাবে ঢুকতে পারে এবং ক্যাম্পাসে শোডাউন দিতে পারে। এই মুহূর্তে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী মঈনুদ্দিন জানান, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু মানুষ এসে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চায়। তারা গেট খোলার অপেক্ষা করেনি। নিজেরাই খুলে প্রবেশ করেছে।

এ সময় দায়িত্বরত উপস্থিত কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কারা প্রবেশ করবে কিংবা বের হবে এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। তাছাড়া প্রক্টর স্যার থেকে এমন কোন নির্দেশনা ছিল না, যে বহিরাগতদের প্রতিহত করতে হবে। এটা প্রক্টরিয়াল টিম ভালো জানবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের ১১তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম রোহান বলেন, প্রক্টর স্যারের উপস্থিতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শোডাউন দেয়। প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরবাইক নিয়ে তারা এসেছিল। পিস্তল, শর্টগান, ককটেল নিয়ে তারা মহড়া দেয়। প্রক্টরের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে ঢুকে ককটেল বিস্ফোরণ করে, শোডাউন দেয়? কিভাবে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করে? এখানে প্রক্টরিয়াল বডির সংযুক্তি রয়েছে। প্রক্টর বহিরাগতদের সাথে শিক্ষার্থীসুলভ আচরণ করেছে। কিন্তু উচিত ছিল ওদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া।

এদিকে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আবাসিক হলে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিরাপত্তাহীনতায় আশেপাশের মেসগুলোতে অবস্থান নিচ্ছেন তারা।

এর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেইজ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

[caption id="attachment_372505" align="alignnone" width="1383"] কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে একাংশের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসে শোডাউন। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আধা ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক ওয়াল থেকে তা আবার সরিয়ে নেওয়া হয়। কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মধ্যে তথ্যগত পার্থক্য দেখা দেয়।

এ বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, মহড়ার ঘটনায় আমরা প্রক্টরিয়াল টিমকে তিনদিনের মধ্যে একটা প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন অনুসারে আমরা মামলা করবো।

বহিরাগতদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হওয়ার পর তদন্ত হলে বুঝা যাবে কারা বহিরাগত। তারপর আমরা ব্যবস্থা নেব।

ইন্দনের বিষয়ে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকে নিয়ে আসেন আমি তাদের সাথে কথা বলবো। গতকাল (শুক্রবার) একটা কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে ঝামেলা আন্দাজ করতেই প্রক্টরিয়াল টিম ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন জানান, আমরা বিষয়টি এখনও পর্যবেক্ষণ করছি। কারা প্রকৃত দোষী, বহিরাগতরা কেন এসেছে সব বিষয়ে উর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করব। পরবর্তীতে আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিব। এই মূহূর্তে এর থেকে বেশি কোন মন্তব্য করতে পারব না।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। তবে এতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, প্রক্টর সেখানে উপস্থিত থেকেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তিনি এই সংঘর্ষকে বিভিন্নভাবে উস্কে দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App