×

জাতীয়

শারদীয় দুর্গোৎসব কাল শুরু, প্রস্তুতির ব্যস্ততা তুঙ্গে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:১২ এএম

শারদীয় দুর্গোৎসব কাল শুরু, প্রস্তুতির ব্যস্ততা তুঙ্গে

ছবি: ভোরের কাগজ

রাত পোহালেই সপরিবারে দেবী দুর্গার প্রতিমা উঠবে মণ্ডপে মণ্ডপে। সেই প্রস্তুতিই চলছে বেশ জোরেশোরে। প্রতিমা শিল্পীদের কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। তবে ডেকোরেটর কর্মীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। পেরেক-হাতুড়ির খুঁটখাট শব্দ এখন মন্দির ও মণ্ডপ এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দুর্গা মণ্ডপের মতো স্থায়ী মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, তাঁতীবাজার ও সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। আর শাঁখারি ও তাঁতীবাজার এলাকায় পূজার সাজসজ্জা ও প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির দোকানগুলোতে দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দেবীর গহনা, হাতের শাঁখা- পলা, মালা, নূপুর, মুকুট, তীর, ধনুক, চক্র, গদা, খড়গ, ত্রিশূল, অসুরের অস্ত্র, দেবীর শাড়ি, ব্লাউজের কাপড়, মাথার চুল কিনতে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শাঁখারী বাজারে ভিড় করছেন আয়োজকরা। সাজঘর, পোশাক ঘর, নাগ ভাণ্ডার, পদ্মভাণ্ডার, লক্ষ্মীভাণ্ডারসহ বিভিন্ন দোকানে থরে থরে সাজানো আছে এসব জিনিস। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে দোকানদারদের।

শাঁখারী বাজারের সাজ ঘরের স্বত্বাধিকারী রতন দত্ত জানান, প্রতিমার কাপড় গজ প্রতি ৮০ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত আছে। অস্ত্র সেট ১২০ থেকে ৫শ টাকা, মাথার চূড়া সেট ৩৫০ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাথরের মালা (৫ জনের এক সেট) ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। কাগজের মালা প্রতি পিস ৬০ থেকে দেড়শ টাকা। ‘বৈ-জয়ন্তি’ মালার দাম একটু বেশি। এ মালার বিশেষত্ব হলো পাঁচ ধরনের সুগন্ধি ফুল দিয়ে এটি দেবী দুর্গার গলার জন্য তৈরি করা হয়। এর মালার দাম শুরুই হয় দেড় হাজার টাকা থেকে।

দেখা গেছে, সোলার তৈরি বিভিন্ন নকশাও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। অস্থায়ী মণ্ডপ সজ্জার কাজে এসব নকশা ব্যবহার করা হয়। আকার ভেদে এসব নকশা বিক্রি হচ্ছে একশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাঁখারী বাজারের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় তোড়ন।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী ১ অক্টোবর শনিবার ষষ্ঠী, ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর অষ্টমী, ৪ অক্টোবর নবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।

নাগ ভাণ্ডারের বিক্রেতা সুদিপ রায় বলেন, মানুষের সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে পূজার খরচও বেড়েছে। এ কারণে মানুষও পূজার ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এবার আয়োজকরা প্রতিমাকে মাটি আর রং ব্যবহার করে পূজার জন্য প্রস্তুত করছে। এ কারণে দেবী দুর্গাকে সাজানোর জন্য কাপড়সহ কিছু জিনিসের চাহিদা অনান্য বারের চেয়ে এবার কম।

৫১ বছর যাবত দুর্গাপূজা করছে শাঁখারী বাজারের প্রতিদ্ব›দ্বী ক্লাব। প্রতিমা ও মণ্ডপে প্রতিবারই এক একটি থিম নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করে দর্শকদের মুগ্ধ করে এই ক্লাবের আয়োজন। তবে এ বছর পূজায় কোনো থিম থাকছে না। মাতৃ পূজাই প্রাধান্য পাবে। ক্লাবের উৎপল কুমার ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছর একেকটা থিম নিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়।

কিন্তু এ বছর কোনো থিম থাকছে না। বিদ্যুৎসহ সবকিছু সাশ্রয়ের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আলোকসজ্জাসহ পূজার আয়োজকদের প্রতি কিছু নির্দেশনাও রয়েছে সরকারের। আলোকসজ্জা যেহেতু করতে পারছি না তাই কোনো থিম ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর দেবী দুর্গার বন্দনার বিষয়টিকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।

মণ্ডপের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে নিরাপত্তা দেয়া হয় সেটি তো থাকবেই। পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমটাকেও জোরদার করার নির্দেশ রয়েছে। আমরা সেই বিষয়গুলোতেই জোর দিচ্ছি।

বোধনের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী ওই দিন সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হবে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হবে বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। ভক্তের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ।

ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই উৎসবের মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী সপরিবারে পিতৃগৃহে আগমন করেন। দেবীর ১০ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে। যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে উপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ণ বাণ ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ দশটি অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না। মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষ্মী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক।

পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাত থেকে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দু মতে অকাল বোধনও বলা হয়। বাঙালির হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী ১ অক্টোবর শনিবার ষষ্ঠী, ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর অষ্টমী, ৪ অক্টোবর নবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী। প্রতি বছর বিভিন্ন বাহনে সপরিবারে শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে আসবেন গজে (হাতি) চড়ে। এর ফল হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। যার ফল হচ্ছে, বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যাওয়ার লক্ষণ শুভ না হলেও ভক্তের বিশ্বাস, দেবী মঙ্গলময়ী। তিনি জগতের মঙ্গলই করবেন। সন্তানদের আশীষ দেবেন দু’হাত ভরে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪২টি- যা গত বছরের চেয়ে ৭টি বেশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App