×

জাতীয়

নতুন মাথাব্যথা ‘হিজরত’!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

নতুন মাথাব্যথা ‘হিজরত’!

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজা উদযাপনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানে তালেবান সাফল্যে উজ্জীবিত আইএস অনুসারী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে সক্রিয়

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ভেতরে ভেতরে উজ্জীবিত। তারা প্রকাশ্যে ‘দাওয়াতি’ কাজের চেষ্টা করছে। জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও নব্য জেএমবি ছিল ইসলামিক স্ট্রেট (আইএস) আনুসারী। আনসার আল ইসলাম হচ্ছে আল কায়েদার অনুসারী। আফগানিস্তানে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তালেবান শাসন কায়েমের কারণে আনসার আল ইসলাম মনে করছে এদেশেও তারা সফল হতে পারবে। সংগঠনটি যেসব স্থানে ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রভাব বেশি, সেসব স্থান টার্গেট করে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় কার্যক্রম জোরদার করেছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চলে যাওয়ার পর তালেবান যে তৎপরতা শুরু করে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) পর আনসার আল ইসলাম এখন সবার কাছে পরিচিত। জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ‘আদর্শিক মিল’ রয়েছে। আনসার আল ইসলাম যে উগ্রবাদীদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কুমিল্লায় ৬ জনের হিজরত, সিলেটে ৪ জনের হিজরত এবং নারায়ণগঞ্জে কয়েকজনের হিজরতের ঘটনায় জঙ্গিবাদের নতুন মেরুকরণে নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দারা। এর মধ্যে ডা. শাকির ধরা পড়ায় আনসার আল ইসলামের কাট আউট পদ্ধতিতে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের শেকড় খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ জঙ্গি নেতা সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার হাত ধরে তারা বড় ধরনের অপকর্মের সুযোগ খুঁজছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিশেষ করে অনলাইন প্লাটফর্মে চলছে তাদের কার্যক্রম। ময়মনসিংহে পুলিশ খুন করে প্রিজনভ্যান থেকে পলাতক শীর্ষ জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনও দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতে কলকাঠি নাড়ছে।

এটিইউর তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নব্য জেএমবির ৫ সদস্য, জেএমবির ১৯, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ৪৯, আল্লাহর দলের ৩১, হিযবুত তাহরীরের ২৭, আনসার আল ইসলামের ২৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের চারজনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ১৫৬ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য ১০৪টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে এটিইউ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন ভোরের কাগজকে বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো সবসময় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বর্তমান সময়ে যে তারা মাথা চাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে না, সেটি বলবো না। আনসার আল ইসলাম ও নব্য জেএমবির মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। তবে, এটিইউসহ সিটিটিসি ও র‌্যাব এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যহত রেখেছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো কখনোই তাদের পরিকল্পনা সফল করতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে এটিইউ প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের হিজরতের বিষয়টি সামনে আসছে। এতে কিছুটা ঝুঁকি থাকছেই। তবে যারা নিখোঁজ রয়েছে, তাদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এটা মনে রাখা জরুরি, ঘর ছাড়া মানেই জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্যে গিয়েছে বা দেশ ছেড়েছে; বিষয়টি তেমন নয়। ইতোপূর্বে অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে। যারা জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করতে বের হয়নি। যেহেতু কিছু তরুণ নিখোঁজ এবং হিজরত জঙ্গিবাদের প্রথম পদক্ষেপ, সেক্ষেত্রে আমরা যাচাই করে দেখছি বিষয়টি। হিজরতের গন্তব্য বাইরের কোনো দেশ কিনা? জানতে চাইলে এস এম রুহুল আমিন বলেন, এটা বলা মুশকিল। তবে, জঙ্গিরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীকে আইডল মেনে থাকে। সেক্ষেত্রে মগজ ধোলাই করতে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উদাহরণ টানা হয়ে থাকতে পারে। নিখোঁজ তরুণরা দেশের বাইরে হিজরতে গিয়েছে- আপাতত এমন কোনো তথ্য নেই।

কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান আসাদুজ্জামান বলেছেন, আনসার আল ইসলামসহ জঙ্গিরা নিজেরা সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তরুণদের হিজরতে যাওয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। হিজরতের নামে ঘর ছাড়া তরুণদের শনাক্তের চেষ্টা করেেছ সিটিটিসি। তারা দেশেই ঘাপটি মেরে আছে এমনটি মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। বাড়ি ছাড়া তরুণদের মধ্যে ১৬ জন হিজরতের নামে বের হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। যাদের ব্যাপারে পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র‌্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে।

র‌্যাবের পরিচালক (গোয়েন্দা) লে. কর্নেল মশিউর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে। নেপথ্যের কারিগরদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে, দ্রুতই সুরাহা হবে। নিখোঁজদের সঠিক হিসাব জানা না থাকলেও এর সংখ্যা কম নয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা হিসেবে পরিচিত আনসার আল ইসলাম। যা একিউআইএস নামেও পরিচিত। গত মাসের শেষ দিকে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাত কলেজছাত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে র‌্যাবসহ একাধিক সংস্থা। এরপর পটুয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুয়াকাটা ও গোপালগঞ্জের আরো সাতজনের দুই থেকে তিন মাস ধরে নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর পায় তারা। এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে সিলেটের চার তরুণ শেখ আহমেদ মামুন (২৩), মো. হাসান সায়িদ (২৪), সাইফুল ইসলাম তুহিন (২৪) ও মো. সাদিকুর রহমান (৩৩) নিখোঁজ রয়েছেন। কুমিল্লার সাত তরুণ ও সিলেটের চার তরুণ এবং সর্বশেষ পটুয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের তরুণদের নিখোঁজ হওয়া একই সূত্রে গাঁথা। কুমিল্লার পর পটুয়াখালীসহ অন্য এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে নেমে ৫০ জনের বেশি তরুণের ঘর ছাড়ার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো অপারেশন, হামলার ঘটনার পর জড়িত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও সংগঠনটির অন্য পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মূলত কাট আউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনার কারণেই তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

জঙ্গি সংগঠনটি এমনভাবে তাদের কাজ করে, দাওয়া শাখার সদস্যরা একে অন্যের পরিচয় জানতে পারেন না। এক তৈয়ফার কোনো সদস্যই (মামুর) অন্য তৈয়ফা বা সেই তৈয়ফার সদস্য কারা, তারা কী কাজ করছেন- এর কোনো কিছুই জানতে পারেন না। তাদের সব কাজই চলে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে। তাদের পরিচয় ও কাজ সম্পর্কে জানেন কেবল ‘মাশুল’ ও ‘মাজমাহ মাশুল’ শ্রেণির নেতারা। আবার এক মাশুলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারেন না অন্য কোনো মাশুল। শুধু মাজমাহ মাশুলদের কাছেই সব মাশুলের কর্মকাণ্ডের খবর থাকে। বিষয়টা পরিচিত ‘কাট আউট সিস্টেম’ হিসেবে।

সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, আফগানিস্তানে তালেবান জঙ্গিদের উত্থানের খবরে তৎপরতা বাড়িয়েছে আনসার আল ইসলাম, চেষ্টা চালাচ্ছে প্রকাশ্যে দাওয়াতি কাজ করতে। তবে আফগানিস্তানের জঙ্গিদের নেতৃত্বে রয়েছে সালাফি মতাদর্শীরা। আর বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো ‘রিসোর্স’ হিসেবে ব্যবহারের জন্য টার্গেট করেছে বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার উগ্রপন্থি শিক্ষক ও আলেমদের। চাইছে তাদের সংগঠনের সদস্য হিসেবে ‘রিক্রুট’ করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করতে। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া মাওলানা মাহমুদ হাসান গুনবী, হারুন ইজাহার, রফিকুল ইসলাম মাদানি ও আলী হোসেন ওসামা তাদের হয়ে যুব সমাজের ‘মগজধোলাই’ করছিলেন। আরেক আলোচিত মাওলানা আবু ত্ব-হা আদনানও তাদেরই অনুসারী।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়ে একটা ধারণা পেয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা। বেসরকারি ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী আনোয়ার ইব্রাহিম, মারুফ ও মোরসালিনসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গিনেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক কাঠামো বেশ শক্তিশালী। ৫-৬ সদস্যবিশিষ্ট ফতোয়া বোর্ডের মাধ্যমে সংগঠনটির পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দাওয়া, মিডিয়া, আইটি, লজিস্টিক ও আসকারি (হামলা বা হত্যা বাস্তবায়নকারী শাখা) শাখার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এদের মধ্যে দাওয়া ও লজিস্টিক শাখার কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি। ‘দাওয়া’ শাখার মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘লজিস্টিক’ শাখার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কাজ করছে আনসার আল ইসলাম। দাওয়া শাখার মাধ্যমে প্রত্যেক ‘মাদু’ (প্রাথমিক টার্গেট) ও মামুরকে (প্রাথমিক সদস্য) প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা, প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞান ও ‘ইমান-আকিদার ওপরে বয়ান’ দেয়া হয়। দাওয়া শাখা সদস্য সংগ্রহের জন্য প্রথমেই যাকে টার্গেট করে, তাকে মাদু নামে ডাকা হয়। মাদুকে নিয়মিত বিরতিতে একাধিক কোর্স করিয়ে ইখওয়াহ বা মামুর হিসেবে দলভুক্ত করা হয়। এরূপ ৪-৫ জন মামুর মিলে একটি তৈয়ফা বা সেল বা মডিউল গড়ে তোলে সংগঠনটি।

এই সেলের প্রধানকে মাশুল বলা হয়। একাধিক তৈয়ফার নেতাকে মাজমাহ মাশুল বলা হয়। মাজমাহ মাশুলদের প্রধান যিনি, তিনি আইডিএন বা হাদি হিসেবে ফতোয়া বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ‘আসকারি’ শাখার রয়েছে তিনটি অণু বিভাগ- ইনটেল, অপস ও ল্যাব। ‘ইনটেল’ বিভাগের জঙ্গিরা সাধারণত গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে টার্গেট করা যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে ‘অপস’ বিভাগের জঙ্গিরা ‘অপারেশন’ বাস্তবায়ন করে। এই অপারেশনের আগে ‘ফতোয়া বোর্ডের’ অনুমোদন নিতে হয়। ‘আসকারি’ শাখার ‘ল্যাব’ বিভাগের কাজ মূলত বিভিন্ন বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির উপকরণ নিয়ে গবেষণা। আসকারি শাখা নিয়ন্ত্রণ করেন সংগঠনটির আমির। এই শাখার দায়িত্বশীল জঙ্গিদের সঙ্গে অন্য কোনো শাখার সদস্য বা নেতার কোনো সম্পর্ক থাকে না। দাওয়া বিভাগের অধীনে থাকা বিভিন্ন তৈয়ফা থেকে বাছাই করা মামুরদের পৃথকভাবে আসকারি শাখায় স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আসকারি শাখার অপস অণু বিভাগের মাধ্যমে ‘অপারেশন’ চালানো হয়। ‘লজিস্টিক’ শাখার কাজ মূলত দুটি- অর্থ সংগ্রহ ও যে কোনো হামলায় ব্যবহৃত ইক্যুইপমেন্ট জোগাড়। তবে তারা এখন যে কোনো ধরনের হামলা বা ‘টার্গেট কিলিং’ থেকে সরে এসেছে। আপাতত তারা প্রচার, অর্থ ও কর্মী সংগ্রহে বেশি মনোযোগী। এ তিন বিষয়ে শক্তিশালী হওয়ার পর তারা হামলার দিকে এগোবে। আনসার আল ইসলামের প্রাথমিক সদস্যকে ‘মামুর’ বলা হয়। কয়েকজন ‘মামুর’ মিলে তৈরি করা গ্রুপকে ডাকা হয় ‘তৈয়ফা’ নামে। এরূপ একটি তৈয়ফা বা একাধিক তৈয়ফা মিলে গঠন করে একটি সেল, যেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জঙ্গিদের ‘স্লিপার সেল’ হিসেবে পরিচিত। এরূপ একটি স্লিপার সেলের দায়িত্বশীল জঙ্গি নেতাকে সাংগঠনিকভাবে ‘মাশুল’ পদবি দেয়া হয়। কয়েকজন ‘মাশুল’-এর দায়িত্বশীল নেতাকে ‘মাজমাহ মাশুল’ বলা হয়। আবার কয়েকজন মাজমাহ মাশুলের দায়িত্বশীল নেতাকে ডাকা হয় ‘হাদি’ নামে। সংগঠনের কর্মকাণ্ডে এ ‘হাদিরা’ই ফতোয়া বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। যে বোর্ডটি যে কোনো অপারেশন, হত্যাকাণ্ড বা হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়।

সিটিটিসি ও এটিইউ কর্মকর্তারা জানান, আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরাই বাংলাদেশে প্রথম মরিচবাতি দিয়ে ডেটোনেটর তৈরি করেন। ‘ক্লোজ কমব্যাটে’ ব্যবহারের জন্য বিশেষ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি তৈরিতে পারদর্শী তারা। এ ধরনের একাধিক ডেটোনেটর ও আগ্নেয়াস্ত্র সিটিটিসি তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপর আনসার আল ইসলাম তাদের টুইটার পেজে নিজেদের একিউআইএসের বাংলাদেশ শাখা দাবি করে। আনসার আল ইসলাম ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩টি হামলার দায় স্বীকার করে। এসব ঘটনায় নিহত হন ১১ জন, যাদের অধিকাংশ ছিলেন ব্লগার। নিহতদের মধ্যে আরো ছিলেন প্রকাশক, শিক্ষক ও সমকামী অধিকারকর্মী। বর্তমানে একিউআইএসের প্রধান হিসেবে রয়েছেন এক পাকিস্তানি নাগরিক, যিনি ওস্তাদ ফারুক নামে পরিচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App