×

মুক্তচিন্তা

পশ্চিমা মিডিয়া যেভাবে বাংলাদেশকে দেখে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:২০ এএম

পশ্চিমা মিডিয়া যেভাবে বাংলাদেশকে দেখে

পশ্চিমা মিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যম, যার প্রভাব বিশ্বব্যাপী রয়েছে। কিন্তু এই পশ্চিমা মিডিয়াগুলো তাদের স্বার্থের বাইরে কাজ করে না। তারা প্রায়ই তাদের মতামত পরিবর্তন করে এবং আয়ের উৎস, শ্রোতা এবং আগ্রহ অনুযায়ী তাদের তথ্যের বিধান নির্ধারণ করে। বেশিরভাগই তারা তাদের মালিক বা দেশের বা গোষ্ঠীর স্বার্থ এবং মতামত পরিবেশন করে। অনেক সময় তারা সেই অনুযায়ী মতামত এবং বিকল্প তৈরি করে। যখন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ইরানের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় যুদ্ধ শুরু করে, যখন রামসফিল্ড ইরাক সফর করেন এবং সাদ্দামকে তার নেতৃত্বের জন্য প্রশংসা করেন (সাদ্দাম তখনো একজন নৃশংস স্বৈরশাসক ছিলেন, আর বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল), তখন তিনি পশ্চিমা মিডিয়ার একজন নায়ক ছিলেন। কিন্তু‘ কুয়েত আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হিটলার বানায় সেই একই মিডিয়া। মিডিয়া পশ্চিমের অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাকে মহিমান্বিত করেছিল, যখন কুয়েত থেকে পিছু হটা ইরাকি সৈন্যদের কলাম এবং যানবাহন মরুভূমি অতিক্রম করে বাড়ি যাচ্ছিল, তখন তাদের নির্মমভাবে গণহত্যা করা হয়েছিল। তখন একজন পশ্চিমী পাইলট তার বিমানে আরো হত্যা করার জন্য পর্যাপ্ত বুলেট ছিল না বলে দুঃখ করেছিল, তা পশ্চিমা মিডিয়া ব্যাপকভাবে গর্বের সঙ্গে প্রচার করে। জেনেভা কনভেনশনের বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সেই পশ্চিমা মিডিয়া নীরব ছিল। তাছাড়া হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার কথা কখনো উল্লেখ করেনি। এখানে যেমন তারা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে পারে, তেমনি প্রত্যেক দেশে তারা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী সংবাদ প্রচার করে থাকে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু‘ এ বিষয় নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো তেমন সংবাদ প্রকাশ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব সংবাদ নেতিবাচক, তারা সে সংবাদগুলোকে সব সময় হাইলাইট করে প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে প্রায় সিলেট বিভাগের সব জেলা তলিয়ে যায়। এতে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সিলেটের বন্যা পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে কভারেজ পায়। মানুষের মানবিক সংকটগুলোকে হাইলাইট করে প্রকাশ করা হয়। গত বছর ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকে। যার মাধ্যমে তারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি ইস্যুগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করে। যার মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চেয়েছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এছাড়া ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার ম্যান’ শিরোনামে আল জাজিরা যে সংবাদ প্রচার করেছিল তাও পশ্চিমা মিডিয়ায় বেশ কাভারেজ পেয়েছিল। এভাবে পশ্চিমা মিডিয়া নেতিবাচক সংবাদগুলো বেশি বেশি প্রচার করে তারা আমাদের মাঝে এক ধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি করে রেখেছে, যেমনটা করে রেখেছিল ২০০ বছর ব্রিটিশরা শাসন করে। তারা আজো আমাদের সেভাবে দেখতে চায়। তারা এসব নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে দেখাতে চায় তারাই শ্রেষ্ঠ। তাদের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারব না। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিমাদের প্রতি ঠিক তার বিপরীত। গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ মারা গেছেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ব্রিটেনের রানির কৃতিত্ব, সফলতা, তার অর্জন ইত্যাদি এমনভাবে প্রচার করেছেন, তাতে মনে হয় তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে বড় অবদান রেখে গেছেন। অথচ তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে কলোনি স্থাপন করে মূল্যবান ধন-সম্পত্তি লুট করে নিয়ে গেছেন। সেই মহামূল্যবান সম্পত্তির মাধ্যমে তারা আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ। কিন্তু‘ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে এ ধরনের সংবাদ প্রচার করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশ হলেও দারিদ্র্যের হার এখনো অনেক বেশি। কিন্তু‘ পশ্চিমের দেশগুলোতে দরিদ্রতা কম নয়। রাস্তার পাশে হাঁটলে দেখা যায় অনেক মানুষ বসে আছে যাদের ঘর নেই, খাবার নেই, নেই কোনো আয়। অথচ আমরা এটা চিন্তা করতে পারি না, পশ্চিমা দেশগুলোতে দরিদ্র মানুষ রয়েছে। কিন্তু তাদের দেশে দরিদ্র মানুষ রয়েছে এটাই বাস্তব। কিন্তু‘ আমরা জানি না, কারণ পশ্চিমা মিডিয়া কখনো তাদের কথা প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মিডিয়ার বিদেশি সংবাদদাতা নেই। যার ফলে আমরা বিদেশি সংবাদ সোর্সের ওপর নির্ভর করি। এতে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো আমাদের যা দেখায় আমরা তাই দেখি। আবার পশ্চিমের কোন দেশ থেকে কোন তরুণী বাংলাদেশের যুবককে বিবাহ করতে চলে আসল, সে সংবাদকে আমরা হাইলাইট করে প্রকাশ করি। যার মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলো পশ্চিমা দেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দেয়। এভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো পশ্চিমা বিশ্বের সংবাদগুলো ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করে থাকে। তাছাড়া পশ্চিমের দেশগুলোতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে তাদের বন্দুকধারী হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু‘ ঠিক একই কাজ কোনো মুসলিম দেশে হলে তাদের সন্ত্রাসী বলে প্রচার করতে কোনো দ্বিধা করে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে পশ্চিমের দেশে কোনো হামলা হলে তারাও বন্দুকধারী বলে প্রচার করে।

এম আর মিজান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App