×

স্বাস্থ্য

তরুণদের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে হৃদরোগে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৬ এএম

তরুণদের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে হৃদরোগে

প্রতীকী ছবি

হৃদয়ের কথা বলতে মানুষ ব্যাকুল হলেও হৃদযন্ত্রের যত্নের ক্ষেত্রে উদাসীন। আর তাই হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশ্ব জুড়েই এই ভয়াবহ চিত্র। ২০১৮ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে হৃদরোগে। প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংক্রামক রোগে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ হৃদরোগের কারণে।

এই প্রেক্ষাপটে আজ ২৯ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে ভালোবাসুন; প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করুন’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আজ সকাল ৭টায় রাজধানীর মিরপুর শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে একটি শোভাযাত্রা এবং ৯টায় ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে একটি গণমুখী সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, দেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। দেশে প্রতি ৫ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ আছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সময় মনে করা হতো- কেবল প্রবীণদেরই হৃদরোগ হয়। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তরুণদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনকি শিশুদেরও হৃদরোগ হচ্ছে।

ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিয়ালজির বিজ্ঞান সম্মেলনে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হলে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানত হৃদরোগ দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি জন্মগত, অন্যটি জন্মের পরে পারিপার্শ্বিকগত। পরিবারিকভাবে বাবা-মায়ের হৃদরোগ থাকলে সন্তানের হয়। আর যদি কারোর ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন বা ফাস্টফুডে আসক্তি থাকে তাদের হৃদরোগ বেশি হয়।

তরুণদের মধ্যে আক্রান্তের কারণ প্রসঙ্গে তারা বলছেন, বেশি সময় বসে থাকা, টিভি, ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনে আসক্তি, শারীরিক ব্যায়াম না করা, ধূমপান, ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাসের কারণে আগের তুলনায় কমবয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যেই হাইপার কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা দেখা যায়। এ কারণেও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগে আক্রান্তের অন্যতম কারণ ধূমপানও। অনেকে অল্প বয়সেই ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। আগে চল্লিশোর্ধ্ব কিংবা পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এ রোগে আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন ২০ থেকে ৩০ বছরের যুবককেও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে যাদের অধিকাংশই ধূমপান করেন।

গতকাল বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কন্টেন্ট এন্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রোসেসড প্যাকেজড ফুডস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘রিজলভ টু সেভ লাইভস’-এর সহায়তায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ পরিচালিত এই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ রয়েছে। আর ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১ দশমিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, দেশে প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের হার দিন দিন বাড়ছে। দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই এ জাতীয় খাবার খায়। লবণ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদন। কিন্তু অতি মাত্রায় লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে অতিরিক্ত লবণের প্রাপ্ত উৎসগুলো কমিয়ে আনতে হবে। আর এসব রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে লবণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের প্যাকেটে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসি) হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশনের (সিপিআর) সচেতনতার মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।

গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে (এনসিডি) লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

তামাকজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে জোর দিয়ে এডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে ১৯ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত হৃদরোগে মারা যায়। তামাকজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক কোম্পানির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না নিয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার দাবি জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App