×

অর্থনীতি

মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে সুশাসন নিশ্চিতের পরামর্শ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৪ এএম

মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে সুশাসন নিশ্চিতের পরামর্শ

পিটার ডি. হাস

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায়। কিন্তু তারা এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত।

ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এসব কথা বলেন। আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাফিজুর রহমান খান, সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী, আইবিএফবি চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রমুখ।

পিটার হাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপিত হচ্ছে। এ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ থাকতে হবে। এর সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয়, ততক্ষণ এ সমর্থন থাকবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রমের মানোন্নয়ন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রসারিত করা ও বৈচিত্র্য আনা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে।

এ সময় পিটার হাস আরো বলেন, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই আরো ভালোভাবে জানতে হবে যে, তাদের জন্য বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশকে অবশ্যই আমেরিকান ব্যবসাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, কিন্তু তারা বিনিয়োগের আগে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ আছে কিনা, তা জানতে চায়। পাশাপাশি শ্রমের মানোন্নয়ন, পরিবেশ, গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও এই বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মার্কিন দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্র। তাই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। অনেক মার্কিন কোম্পানি এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশকে একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে যাচ্ছি। খুব শিগগির ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের পূর্ণকালীন অ্যাটাশে নিয়োগ করা হবে। এতে দুই দেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে।

পিটার হাস বলেন, সংগঠন হিসেবে আইবিএফবি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক শাসনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ আমেরিকান কোম্পানির প্রধানরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করার মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। তারা যদি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাহলে বলা যায় তারা সেখানেই ব্যবসা করতে যাবেন যেখানকার বাজার তারা বোঝেন। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে একদমই সচেতন নয়। তবে এই গ্রুপের সদস্যরা জানেন যে, বাজার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নিতে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর জোরালো কারণ রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ তাদের মনোযোগ আকর্ষণের যোগ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App