×

জাতীয়

ঢাবিতে ছাত্রদলকে বেধড়ক পেটাল ছাত্রলীগ, আহত ১৫

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪০ এএম

ঢাবিতে ছাত্রদলকে বেধড়ক পেটাল ছাত্রলীগ, আহত ১৫

ছবি: ভোরের কাগজ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারসাজি: শ্রাবণ; দায় নেবে না ছাত্রলীগ: সাদ্দাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশকালে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটায় নীলক্ষেত এলাকায় স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত ছাত্রদলের ১৫ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। তবে এ সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনই দায় নেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে- পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদলের নেতাকর্মী নীলক্ষেত মোড় দিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হলে প্রথমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী স্যার এফ আর রহমান হল থেকে লাঠি, স্ট্যাম্প ও রড নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে। এ সময় ছাত্রলীগের এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামকেও আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়। ছাত্রলীগের মারধরে টিকতে না পেরে নীলক্ষেত মোড়ে পিছু হটে ছাত্রদল। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকের বরাদ দিয়ে তিনি বলেন, আহতরা সবাই শঙ্কামুক্ত।

এদিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নীলক্ষেত মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নেয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হামলার বিষয়ে স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, যে ছাত্র সংগঠনের উচ্চপদস্থ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তা শক্ত হাতে দমন করবে।

ক্যাম্পাসে প্রবেশের আগে ছাত্রদল নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রদলের ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মীকে দেখা যায়। ছাত্রদল ঢাবি ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবি আদায়ে ভিসি স্যারের কাছে যাচ্ছি। আমরা এখানে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে আসিনি। আমরা মিষ্টি আর ফুল নিয়ে এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কার্যক্রম শেষ করতে চাই।

এদিকে সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের পার্টি অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ হামলার নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারসাজির অভিযোগ এনে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সময় চাইলে ভিসি ও প্রক্টর আমাদের নির্ধারিত সময় দেন। এর পরে মিডিয়ার মাধ্যমে কর্মসূচির বিষয়টি ছাত্রলীগ জানতে পারলে প্রক্টরকে এ বিষয়ে জানানো হয়। তখন তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে যাদের পদায়ন হয়েছে তাদের যেতে বলেন এবং পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। আমরা স্যারের কথায় নির্ভর করে ক্যাম্পাসে গেলে মারধরের শিকার হই। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শ্রাবণ। এছাড়াও এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বিকাল ৩টায় পার্টি অফিসের সামনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তিনি একক ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে গুরুতর আহত ১৫ জনের পরিচয় তুলে ধরা হয়। তারা হলেন- ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল আমিনুল, মো. মাসুম বিল্লাহ ফারহান, মো. আরিফুর রহমান, মো. নাছির উদ্দীন শাওন, মো. রাজু আহমেদ, সুপ্রিয় দাশ শান্ত, নাজমুস সাকিব, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সোহাগ, প্রচার সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক জসিম খান, বিজয় একাত্তর হলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিব জাভেদ রাফি এবং কবি জসিমউদ্্দীন হলের কর্মী জোসেফ আল জুবায়ের।

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কোনো দায়ভার বহন করবে না। আজকে ক্যাম্পাসে যেটি ঘটেছে সেটি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ। ছাত্রদলের রাজনীতি মানেই সাংগঠনিকভাবে সন্ত্রাসের চর্চা করা। তাদের কমিটি নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের যে কোন্দল চলছে আজকে সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

এদিকে নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ছাত্রদল উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিল, তা দেয়া হয়েছিল। একই সময়ে দুই সংগঠনই অবস্থান নিয়েছিল এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল। এর মধ্যে আমরা হঠাৎ তথ্য পাই নীলক্ষেতে একটা ঝামেলা হয়েছে। আমরা ওখানে দ্রুত যাই এবং কী হয়েছে তা জানার চেষ্টা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App