×

আন্তর্জাতিক

জর্জা মেলোনির জয়ে উদ্বেগে বাংলাদেশিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪২ পিএম

জর্জা মেলোনির জয়ে উদ্বেগে বাংলাদেশিরা

সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন জর্জা মেলোনি

সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন জর্জা মেলোনি। ধারণা করা হচ্ছে, তার ক্ষমতায় আরোহনের মাধ্যমে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে কট্টরপন্থী নেতা পেতে যাচ্ছে ইতালি। এতে অভিবাসনসহ নানা ইস্যুতে ইতালির নীতিগত ও অবস্থানগত অনেক পরিবর্তন আসতে পারে।

যদিও নির্বাচনে মোলোনি বলেছেন, তার দল 'ব্রাদার্স অব ইতালি' সবার জন্য কাজ করবে এবং মানুষের ভরসার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। কিন্তু ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে ইতালির সম্ভাব্য সে পরিবর্তনের প্রভাব হয়ত দেখা যাবে গোটা ইউরোপের ওপর।

কারণ, নির্বাচনে দলটির প্রধান ইস্যু ছিল অভিবাসন। অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর জন্য তারা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেলোনির জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোরও দাবি অভিবাসন কমানো এবং দেশটির উপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রভাব দুর্বল করা।

উদ্বেগ বাংলাদেশিদের মধ্যে

ভেনিসের একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করেন সাইমুন শরীফ জেসি। দুই বছর আগে ফ্যামিলি ভিসায় স্বামীর সঙ্গে ইতালি গেছেন তিনি। দেশটিতে কাজ করার জন্য 'টেম্পোরারি রেসিডেন্সি' পেয়েছেন তিনি কয়েক মাস আগে, যার মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ফ্যামিলি ভিসায় আসার কারণে ইতালিতে তার অবস্থান নিয়ে হয়ত সরাসরি কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু তারপরেও এক ধরণের চাপা উদ্বেগ কাজ করছে তার মনে। গত কয়েক বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এবং লিবিয়া হয়ে প্রচুর মানুষ অবৈধভাবে ইতালি এবং গ্রিসে ঢুকেছেন। তাদের অনেকেই ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ইতালিকে একটি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে অনেকে আবার থেকে গেছেন ইতালিতেই, ছোটোখাটো কাজ করছেন সেখানে। তবে তাদের কারোরই ইতালিতে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি এখনও নেই।

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির উদ্যোগে এই অভিবাসীদের সুরক্ষা দিতে একটি নতুন আইন করা হয়, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ ও বসবাসের অনুমতিপত্র- যাকে 'টেম্পোরারি রেসিডেন্সি' বলা হয়, দেওয়া শুরু হয়েছিল ২০২২ সালেই।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে যেকোন অভিবাসী ইতালির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই 'টেম্পোরারি রেসিডেন্সি'র জন্য আবেদন করতে পারেন এবং আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তিকে প্রথমবার এই অনুমতিপত্র দেওয়ার ৫ বছর পর তিনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভেনিসের একটি আবাসিক হোটেলের মালিক আবেগ আল মামুন জানিয়েছেন, টেম্পোরারি রেসিডেন্সিতে সাধারণত প্রথমে ছয় মাসের অনুমতি দেয়া হয়। এরপর নিয়মিত বিরতিতে ওই অনুমতিপত্র নবায়ন করতে হয় আবেদনকারীকে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাইলে সেই অনুমতিপত্রের নবায়ন না ও করতে পারে, ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয়ত স্থায়ীভাবে বসবাস এবং নাগরিকত্ব পাবেন না একজন অভিবাসী। গত ১৩ মাস ধরে রোমে রয়েছেন সামিউল ইসলাম (ছদ্ম নাম)। ইতালি পৌঁছে প্রায় ৭ মাস বেকার থাকার পর এপ্রিল মাসে তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ ও বসবাসের অনুমতিপত্র নিয়ে রোমে কাজ করছেন। স্থায়ী পারমিট নেই বলে খুবই অল্প বেতনে কাজ করছেন তিনি।

নতুন সরকারের নীতির কারণে তার কাজের অনুমতিপত্র নবায়নে সমস্যা হতে পারে বলে আশংকা জানিয়ে বিবিসিকে সামিউল বলেন, ‘টেম্পোরারি রেসিডেন্সির কারণে মনে একটা আশা সৃষ্টি হয়েছে যে ঠিকমত কাজ করলে এক সময় বৈধভাবে এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো। কিন্তু এখন কী হবে বুঝতেছি না।"

এদিকে, নতুন কট্টর ডানপন্থী সরকারের অভিবাসন নীতিমালার পাশাপাশি মুসলমান বিরোধী মনোভাব রয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। কারণ মেলোনি ইতিমধ্যেই একাধিকবার ইতালিতে মুসলিম অভিবাসীদের আগমনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

চাকরি নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি সামিউল ইসলামের আরেকটি ভীতি হচ্ছে মুসলমান হবার কারণে তিনি কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App