×

জাতীয়

আ.লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা বহিষ্কৃত নেত্রীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

আ.লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা বহিষ্কৃত নেত্রীদের

ইডেন মহিলা কলেজ। ছবি: ভোরের কাগজ

নিজেদের অন্তঃকোন্দলে সৃষ্ট টানা দুই দিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আপাতত অবসান ঘটেছে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের। ক্যাম্পাসেও স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। তৎপরতা নেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী অংশের, যারা এরমধ্যে বহিষ্কার হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ক্যাম্পাসে ফিরে অনুসারীদের নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। বিরোধী অংশটিও কলেজের নিজ নিজ হলে অবস্থান করছেন। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান তারা। এ সময় বহিষ্কৃতরা নিজেদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিও দেন তাকে।

আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গেও দেখা করে এই অংশটি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তারা। আপাতত কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না এই অংশটি। সব মিলিয়ে বহিষ্কৃতরা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

এর আগে গত শনি ও রবিবার টানা দুই দিন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দুই পক্ষের ১০ জনের বেশি আহত হন। এরপর রবিবার গভীর রাতে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে কমিটির ১২ জন নেত্রীসহ মোট ১৬ জন কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারও করা হয়।

এরপর বহিষ্কৃতরা সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের বহিষ্কার আদেশকে অন্যায় উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে বহিষ্কৃতদের কয়েকজন আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে যান। সেখানে তাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করেন। সেখান থেকে বের হয়ে মুখ ঢেকে সোজা ক্যাম্পাসে চলে যান তারা। বের হওয়ার সময় উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেননি তারা।

পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেত্রী ভোরের কাগজকে জানান, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় ৪ নেতার একজনের পক্ষ থেকে বহিষ্কার প্রত্যাহারের আশ্বাস পেয়েছেন। তার পরামর্শেই সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা।

জানা গেছে, বহিষ্কৃতরা যখন আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকেন, তখন দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল আউয়াল শামীম। তিনি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের বরাত দিয়ে বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কথা বলেন। শামীমের ভাষ্য ছিল, ‘আমি নাছিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। নাছিম ভাই তোমাদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তোমাদের বিষয়টা দেখবেন। তোমাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টিও তারা দেখবেন। এখন তোমরা চলে যাও। আন্দোলনের আর কোনো কর্মসূচি দেয়ার দরকার নেই। এরপরই পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে যান তারা’।

এরপর গত সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতা এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দেখা করেন বহিষ্কৃতরা। তাদের একজন বলেন, ‘নানক ভাই ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। আমরা তার সঙ্গে দেখা করেছি। বিস্তারিত বলেছি। আমাদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার প্রতিকার চেয়েছি। আমাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়েছি। সেই সঙ্গে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিচার দাবি করেছি। জবাবে নানক ভাই আমাদের বলেছেন, তোমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য নেতাদেরও দরখাস্ত দাও। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককেও দরখাস্ত দাও। আমরা একসঙ্গে বসে তোমাদের বিষয়গুলো দেখব’।

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রীরা জানান, এরপর তারা সেখান থেকে চলে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে তাকে দরখাস্ত দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য নেতারদেরও দরখাস্ত দেবেন। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এখন তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। আপাতত কোনো ধরনের কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না।

এদিকে গতকাল বিকালে হাসপাতাল থেকে ফিরে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুসারীদের নিয়ে আনন্দ মিছিল করে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। ‘ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ, নেতা মোদের শেখ মুজিব’, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। ‘শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’। ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, উন্নয়নের সরকার, বারবার দরকার’, ডিজিটাল সরকার, বারবার দরকার’, ‘ইডেন কলেজের মাটি, ছাত্রলীগের ঘাটি’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে ইডেন কলেজ প্রশাসন এই ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে জানা গেছে। স্থগিত কমিটির সভাপতি রীভা গতকাল বলেন, শুনেছি কলেজ প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করবে। এখন যারা ছাত্রলীগের বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই। তাছাড়া বহিষ্কার হওয়ার পর সংগঠনও তাদের কোনো দায়িত্ব নেবে না। তারা ক্যাম্পাসে থাকছেন। তদন্ত কমিটি করার পর অবশ্যই অছাত্রদের আর ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ দেবে না। আমরাও চাই, কোনো অছাত্র যেন আর ক্যাম্পাসে থাকতে না পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App