×

জাতীয়

মরিয়ম মান্নানকে নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৪ এএম

মরিয়ম মান্নানকে নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড়

মরিয়ম মান্নানের কান্না করার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়

মায়ের অন্তর্ধানের ঘটনা নিয়ে আলোচনায় আসা মরিয়ম মান্নান এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। মা নিখোঁজ হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অসংখ্য মানুষ তার পাশে থেকে সহানুভূতি জানিয়েছিলেন- তারাই এখন তাকে তুলোধোনা করছেন। মরিয়মের উশৃৃঙ্খল জীবনের কিছু ছবিও এখন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। এমনকি তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলছে নানা কথা। জনপ্রিয় টিভি নাটক ব্যাচেলর পয়েন্টের ‘রোকেয়া’ চরিত্রের সঙ্গে তার মিল রয়েছে বলেও ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

রহিমা বেগম যখন নিখোঁজ হন; গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম- সব জায়গায় তার ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সক্রিয় উপস্থিতি ছিল মরিয়মের। তার কান্নার মধ্যে ছিল রহস্য, কথার ভেতর লুকোচুরি। কখনোই তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দেননি। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তার রূঢ় আচরণের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধেও এ তরুণী নানা অভিযোগ তুলেছেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার করা একটি মরদেহকে নিজের মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নান।

ডিএনএ টেস্ট ছাড়া মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানালেও তিনি দাবি করেন, অর্ধগলিত যে মরদেহ পাওয়া গেছে, সেটাই তার মায়ের। মায়ের শরীর চিনতে কোনো প্রমাণ লাগে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এর মধ্যেই গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পরপরই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। পুলিশেরও ধারণা জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা রহিমার সঙ্গে মিলে মরিয়মসহ তার অন্য সন্তানরা অপহরণের নাটক সাজান। অভিযোগ, রহিমা আত্মগোপনে যাওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয়ের যে কোনো নারীর মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করার পরিকল্পনাও সাজিয়ে রেখেছিলেন তার মেয়েরা।

এর ফলে, প্রথম দিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজে আন্দোলনের পোস্টগুলো লাইক-কমেন্টে-শেয়ার করে ভার্চুয়ালি সঙ্গে ছিলেন; এখন তারাই তার বিরুদ্ধে লিখছেন। রিয়াদ আহমেদ নামে একজন মরিয়ম মান্নানের ফেসবুক পেইজে লেখেন- পাক্কা স্টার জলসার অভিনেত্রী! পুরো বাংলা সিরিয়ালের মতো অভিনয় করল। এর গ্রেড আরো উপরে- ওইসব অভিনয় শিল্পীদের থেকে। কারণ তারা পর্দায় অভিনয় করে বাস্তবে নয়।

সোহানুর রহমান হৃদয় নামে একজন লেখেন- আপনি সেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মরিয়ম মান্নান। আপনি সেই সময় সরকার এবং ছাত্রলীগের নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন। আপনি এত সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারেন, তখন অনেক মানুষ আপনার কথা বিশ্বাসও করেছিল। সেখানে আপনি নানা রকম মিথ্যা বলে সরকার এবং ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। আপনি অসহায় নারীর ভূমিকা পালন করে মিথ্যা বলে তখন সরকারকে বিপদে ফেলেছিলেন। আর এখন আপনার এলাকার ৫ জন নিরীহ মানুষকে বিপদে ফেললেন। আসলে নাটক করতে করতে এটা আপনাদের পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের কাছে নিরীহ সেজে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করে নিজের স্বার্থ হাসিল করা আর লাইম লাইটে থাকাই আপনাদের কাজ। আর আমরাও সাধারণ জনগণ কিছু সঠিকভাবে না জেনেই আপনাদের কান্না দেখে আপনাদের পাশে দাঁড়াই- আসল ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার আগেই। তাই দোষ আপনার একার নয়; দোষ আমাদেরও আছে। আপনি যদি নাটক করে সরকারকে বিব্রত করতে পারেন তাহলে এলাকার সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলা তো আপনার কাছে মামুলি ব্যাপার তাই না?

ফেসবুকে ধূমপানরত মরিয়ম মান্নানের খোলামেলা পোশাক নিয়েও অনেকে মন্তব্য করেন। কিছু মন্তব্যের জবাবও দেন তিনি। যেখানে নিজেকে শাহবাগী ও পোশাক পরার স্বাধীনতা বলে লেখেন তিনি।

জানা গেছে, আলোচিত মরিয়ম মান্নান বর্তমানে একজন নারীবাদী নেত্রী। তিনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় গত ২০১২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। পাস করার পর চলে আসেন ঢাকায়। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনজনরা তেমন কিছুই জানেন না। যদিও তিনি দুটি বিয়ে করেছেন বলে চাউর রয়েছে। মরিয়ম নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি তেজগাঁও কলেজের ছাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনার আগেও কোটা আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে নিজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসেন মরিয়ম মান্নান। শারীরিকভাবে তাকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভাইরাল হন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পোস্ট, ছবি, ভিডিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করে। সে সময় তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম মান্নান। একটি ভিডিওতে দেখা যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। উত্তেজিত অবস্থায় তখন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কী বলেছিল? আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করছে, আমার কোথায় কোথায় ধরেছে? আমাকে কীভাবে কী করেছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করেছে? এখন আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব আমাকে কী করেছে? কেমন করে ধরেছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সহানুভূতি দেখাবে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App