×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে শঙ্কার মধ্যেও বেড়েছে পূজামণ্ডপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৩ এএম

নোয়াখালীতে শঙ্কার মধ্যেও বেড়েছে পূজামণ্ডপ

ফাইল ছবি

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে ১ অক্টোবর। মাতৃত্ব ও শক্তির প্রতীক দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে গতকাল রবিবার শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারাদেশে মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানান ভক্তরা। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।

গেল বছর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালীতে। জেলার চৌমুহনী এলাকার অন্তত ১১টি পূজামণ্ডপ ও ৬টি মন্দিরে একযোগে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বেগমগঞ্জের ছয়ানীতে একটি পূজামণ্ডপ, একটি কালি মন্দির ও দুর্গাপুরে একটি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে চৌহমুনীর ওই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে দুজনের প্রাণহানিসহ লুটপাট করা হয় মন্দিরগুলোর অর্থ, ভাঙচুর করা হয় মণ্ডপগুলোর সব প্রতিমা। চৌমুহনীতে মন্দির ও পূজামণ্ডপের সেই ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত এখনো শুকায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাধিক তৎপরতার মধ্যে অতীতের সব শঙ্কাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জেলায় বাড়ানো হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপ।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জেলায় ১৬৯টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ঘটপূজা হয় ৬টি মণ্ডপে। এরমধ্যে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভায় ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। চৌমুহনীর ১১টি মণ্ডপেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত হয়। এবার জেলায় নতুন করে আরো ৬টি পূজামণ্ডপ বাড়িয়ে ১৭৫টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৫টিতে ঘটপূজা পালিত হবে। এর মধ্যে চৌমুহনী পৌরসভাসহ বেগমগঞ্জে ২৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ বেগমগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব জয় ভূঁঞা বলেন, গত বছর চৌমুহনীতে ৬টি মন্দির ও ১১টি পূজা মণ্ডপে একযোগে যেভাবে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তাতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল, তা এখনো শুকায়নি। তারপরও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সেই শঙ্কাকে শক্তিতে রূপান্তর করে অনেকটা ক্ষুদ্র আকারে মায়ের পূজা-অর্চনা করে আসছে। আমাদের ওপর যতই নির্যাতন হোক মায়ের পূজা আমাদের করতেই হবে।

তিনি বলেন, এবার পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও গত বছরের ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা এখনো আতঙ্কিত। আশা করছি প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি বিনয় কিশোর রায় বলেন, গতবার দুর্গাপূজার উৎসবে চৌমুহনীতে মন্দির ও মণ্ডপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে ক্ষত রয়ে গেছে। তাই গতবারের তুলনায় এবার পূজার প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে আমরা মনোবল হারাইনি। পূজার প্রস্তুতি স্বল্প পরিসরে হলেও এবার জেলায় আরো ৬টি পূজা মণ্ডপ বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের দিক থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। শঙ্কা থাকলেও মায়ের অর্চনাতে কোনো কমতি থাকবে না।

বিনয় কিশোর রায় আরো বলেন, চৌমুহনীতে মন্দির ও মণ্ডপে গতবার হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মোট ১৮টি মামলা হয়েছে। দায়ের করা মামলার মধ্যে ১০টি মামলার বাদী পুলিশ। বাকি ৬টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপ পূজা কমিটির সদস্য, ১টি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরের মালিক ও ১ জন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ। এখন পর্যন্ত কোনো মামলাই নিষ্পত্তি হয়নি। সব মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা (আইনশৃঙ্খলা) বাহিনী, এটা পুলিশ হতে পারে, আনসার হতে পারে, যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বড় মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী টহলে থাকবে।

গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবে জেলার বেগমগঞ্জের চৌমুহনী ও ছয়ানী ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া হামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সেটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ওই ধরনের ঘটনা এড়াতে সরকারের নির্দেশনা মেনে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App