×

জাতীয়

সংবাদ প্রকাশ হলেই কর্মকর্তা শোকজ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৭ পিএম

দেশের ব্যাংকিং সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলেই অনুমান ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক মর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত নিজস্ব জনশক্তির সর্বোচ্চ স্তর নির্বাহী পরিচালক মর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে শাসানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, গণমাধ্যমে ব্যাংকিং সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ার বিষয়ে বাছ-বিছার ছাড়াই অনুমানের ভিত্তিতে অন্তত তিনটি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে এই কারণ দর্শানোর নোটিস ইস্যু করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, ব্যাংকের অনিয়মের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। অথচ কোনো সংবাদেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ব্যতিরেকে অন্য কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য বা সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। নতুন এ সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচলিত অফিস নিয়ম অনুযায়ী, সহকারি পরিচালক বা উপ-পরিচালক পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তা যেকোনো বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ফাইল ইনিশিয়েট (দাপ্তরিক কার্যবলী শুরু করার প্রক্রিয়ার নাম) করে থাকেন। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত পরিচালক বা পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তাদের করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এটির প্রচলন খুব একটা নেই। কিন্তু কর্মকর্তাদের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর নিজেই। আর তাতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার জের হিসেবে এসব কর্মকর্তাদের কারণ র্দশানোর নোটিসে বলা হয়েছে, বিভাগের তথ্য কিভাবে সাংবাদিকরা জানতে পেরেছেন। ডলার সংকট, ডলারের অস্বাভাবিক মুনাফায় জড়িত ব্যাংকের নাম, এসব ঘটনায় ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার সংবাদ, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিস, ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে ডলার পাচার, ঋণ কেলেঙ্কারী, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত কয়েক মাসে। এতে যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংবাদ যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারী ও আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ দেখা দিয়েছে। শুধু কারণ দর্শানোর নোটিসই নয়ই মৌখিকভাবে কয়েকটি বিভাগের কর্মকর্তাদের ভৎসর্না করেছেন। এমনকি সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথাও বলেছেন ওই ডেপুটি গভর্নর।

বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ প্রকাশের পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি সাময়িক নিষেধাজ্ঞার ঘটনা ইতোপূর্বেও ঘটেছে। গত জুলাই মাসে নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার দিনও গভর্নর ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। সাংবাদিকদের প্রতিবাদে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ওইদিন বিকেলেই।

তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি ক্যান্টিন রয়েছে মহাব্যবস্থাপক ও তার অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য। এটি পরিচালনা হয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা হওয়ায় শাখা সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো সংশ্লিষ্ঠ অফিসের মাধ্যমে হওয়ার কথা। প্রতিবার ক্যান্টিন পরিচালনায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। বর্তমান ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস পূর্বে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে পরপর দুই দফায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই বারই সর্বনিম্ন দরদাতা ও এসেসম্যান্ট (যাচাই-বাছাই) কমিটির সুপারিশে রাজধানীর মতিঝিলের একটি পরিচিত রেস্টুরেন্ট মনোনিত হয় প্রাথমিক বাছাইয়ে। কিন্তু দুই বারই শেষ মূহুর্তে ডিজি-২ এর ইচ্ছেতে দরপত্রটি বাতিল করা হয়। যদিও এটির অধিকার তার নেই। ফলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আগের বার কাজ পাওয়া প্রতিষ্টান ‘মনসুর ক্যাটারার’ ক্যান্টিনটি পরিচালনা করছে। ফের তৃতীয় দফায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ক্যান্টিন পরিচালনা করতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিলস্থ প্রধান কাক্যান্টিনটিতে প্রতিদিন হাজারের মতো কর্মকর্তা ও কর্মচারি দুপুরের খাবার ও বিকেলের নাস্তা খেয়ে থাকেন টাকার বিনিময়ে। এর বাইরেও মতিঝিল শাখা থেকে একটি বিভাগকে সম্পূর্নভাবে বিলুপ্ত করে প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এতে শাখা পর্য়ায়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান কার্যালয়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। অথচ ঢাকার বাইরের শাখাগুলো এসব অধিকার স্বাভাবিক নিয়মেই পরিপালন করতে পারছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে গণ মাধ্যমের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে আরো সংকুচিত করে আনা হচ্ছে কি না? এমন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন ও জবাবদিহীতার পরিপন্থি কি-না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, নোটিশ দেয়া হয়েছে, তা জবাব দিলেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। ব্যাংকিং সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও পাওয়ার সুযোগ আছে। তাই তথ্য এখান থেকেই গেছে,এটা বলা যাবে না ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App