×

মুক্তচিন্তা

মশা মারতে কামান ছাগল ধরতে প্রাইভেট কার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩১ এএম

মশা মারতে কামান দাগার কথা যারা বলেন জিজ্ঞেস করলে তাদের কেউই বলতেন পারবেন না কোন কামান- মীর জুমলার কামান না রাশিয়ার টি সেভেন্টি টু কামান। এটা একটা কথার কথা। কামান দাগালেই যেন মশারা সব বাংলার রণাঙ্গনে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি বলা হয় ছাগল ধরতে প্রাইভেট কার তাতে এতটুকু মিথ্যেও বলা হবে না। ছাগলটি ছোট এবং কালো আর প্রাইভেট কারটি তুলনামূলকভাবে বড়ই, গায়ের রং সাদা এবং গাড়ির নম্বর ঢাকা খ ১১-৩৯৫৮। ছাগ-তাড়িত এই গাড়িটির মালিক যদি অপমানিত বোধ করে আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে দেন, আমি মোকাবিলা করতে তৈরি আছি- ছাগল ও গাড়ির চলমান ছবিসহ ডিবিসি টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের ক্লিপ সযতেœ সংরক্ষণ করেছি। ‘ছাগ-তাড়িত’ শব্দটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে- ছাগল তাড়া দিয়েছে তাই গাড়ি পড়ি কি মরি ছুটেছে এটা যেমন সত্য আবার ছাগলের তাড়নাতে ঢাকার নম্বর প্লেটের গাড়িটি চুয়াডাঙ্গা শহরে এসেছে। গাড়িতে দুজন চোর ছিলেন। গাড়ির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় শহরতলির লোকজন সন্দিহান দৃষ্টিতে সাদা গাড়িটির দিকে তাকান আর তাতেই চোরেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বোকা ছাগল ভ্যা ভ্যা করে উঠে তাদের ভ্যাবাচ্যাকা ভাবের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ধরা পড়া ও পরবর্তী গণপিটুনির কথা ভেবে তারা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ধেয়ে আসা জনতাকে পেছনে ফেলে হঠাৎ এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে নেমে যান এবং অনুসরণকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে সটকে পড়েন। জনতা হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে ড্রাইভারহীন-যাত্রীহীন চার চাকার শ্বেতবাহনটিকে ঘেরাও করে ফেলে। গাড়িতে কাউকে না পেয়ে ধাবমান জনতা যেন হতাশায় ভেঙে না পড়ে সেদিকটা সামলে নিতে ভেতর থেকে কালো ছাগলটি বলে উঠে, ভ্যা ভ্যা- আমি তো আছি। সংবাদের এই ক্লিপটির নিচে কিছু মন্তব্য রয়েছে- একজন বলেছেন এরা সরকারি দলের চোর। আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই- সরকারি দলের হলে এত কাঁচা হওয়ার কথা নয়। তারা ছাগলও নিতে পারেনি আবার নিজেদের গাড়িটিও ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছে- চৌর্যবৃত্তিতে তারা ব্যর্থ, তারা চোর সমাজের কলঙ্ক। থানাদার জানিয়েছেন ছাগলের মালিক ছাগল নিতে এসেছেন কিন্তু গাড়ির মালিক আসেননি। ছাগল ও গাড়ি থানার হেফাজতখানায় আছে আর দুজন অপেশাদার এবং অবশ্যই বেসরকারি দলের চোর কোথায় কেমন আছেন কে জানে! চৌর্যবৃত্তিতে ব্যর্থ এমন ছাগ-তস্করকে ফ্লোর ক্রস করলেও সরকারি দল নেবে না। ছাগলের মর্যাদা বাড়াবার এমন সুবর্ণ সুযোগ আর আসবে কি না বলা মুশকিল। ‘ছাগল ধরতে প্রাইভেট কার’- এই কথাটা আংশিক প্রমাণিত হলেও চুরির উদ্যোগ সফল না হওয়ায় কথাটা চালু করা মুশকিল হয়ে যাবে। এমনিতে বাঙালির ছাগল চুরির ‘ঐতিহ্য’ সর্বজনবিদিত। ১৯৪৬-এ দাঙ্গা দমন করতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যখন নোয়াখালী এলেন তার নিত্যকার দুগ্ধদোহনের ছাগলটা চুরি হয়ে গেল। গান্ধীর কোনো জীবনীকার এই চুরির দায় থেকে আমাদের নিষ্কৃতি দেননি। এমনিতেই ছাগলের মর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন- কেউ এটা-ওটা খেলেই প্রশ্ন ওঠে ছাগলের মতো খাচ্ছে নাকি? এমনকি আমলা-মন্ত্রীরা একটু আলগা কথা বললেই রব ওঠে ছাগলের মতো কী যা-তা বলছেন। যিনি বলছেন যেন তিনি ছাগলকে যা-তা কথা বলতে শুনেছেন, মশা মারতে কামান দাগাতে দেখেছেন। গাড়িতে ছাগল রেখে পালিয়ে যাওয়া দুজন বড়জোর ছাগলটাকে জবাই করে খেতেন- এটা বিক্রির টাকায় তো আর মানি লন্ডারিং করে স্ত্রীর নামে, শ্যালিকার নামে কানাডার বেগম পাড়ার বাড়ি কিনতে পারতেন না। ছাগল আর মেষের মধ্যে মর্যাদাগত তফাৎ আছে। মেষবিদ্যা বলে একটি বিষয়ই আছে ‘অভিনোলজি’ কিন্তু ছাগবিদ্যা এমন কোনো মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়নি যে এটা নিয়ে কোনো একটা নতুন পাঠ্য বিষয় শুরু হবে। সংখ্যাতে মেষ ছাগলকে মেরে দিয়েছে। করোনা-উত্তর পৃথিবীতে ছাগলের সংখ্যা প্রায় ১ বিলিয়ন আর মেষের সংখ্যা ১ বিলিয়ন ১৭৬ মিলিয়ন। কবি শামসুর রাহমান মেষ নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন, ছাগল তার কবিতায় উঠে আসেনি। ‘মেষের মেষ আছিস বেশ/ভাবনা চিন্তার নেইকো লেশ।’ ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের কদর কিছুটা বাড়ায় উৎপাদনও বেড়েছে। ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে। শীর্ষ স্থানে চীন, দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে যথারীতি ভারত, তৃতীয় স্থানে পাকিস্তানে, চতুর্থ নাইজেরিয়া। বাংলাদেশের ঠিক পরের স্থানটিই মিয়ানমারের। উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে হলে কি হবে ছাগল আর মেষ মিলিয়ে ২০১৩ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মাথাপিছু মাংস খাওয়া হয় বছরে ১.৩০ কিলোগ্রাম আর মঙ্গোলিয়ানরা খায় মাথাপিছু ৪৮.৫ কেজি। পাকিস্তানিরা খায় মাথাপিছু ২.৪০ কেজি, তবে ভারতীয়দের চেয়ে বেশি খাচ্ছি এমন সান্ত¡না আছে আমাদের। ভারতে মাথাপিছু বার্ষিক ভোগ কেবল ৭০০ গ্রাম, ১ কেজির চেয়েও ৩০০ গ্রাম কম। চুয়াডাঙ্গার সেই ছাগলটা চোরদের কিংবা তাদের বন্ধু-স্বজনদের ভোগে লাগলে আমাদের পার ক্যাপিটা কনজাম্পশন একটু হলেও তো বাড়ত। যে গাড়িটা ছাগল ধাওয়া করে শেষ পর্যন্ত নিজেই ধরা পড়েছে এবং হাজতবাস করছে, এটাকে বাজেয়াপ্ত করে জাদুঘরবন্দি করা উচিত। জোর দিয়ে বলা যাবে মশা মারার কোনো কামান পৃথিবীর কোনো জাদুঘরে নেই, কিন্তু ছাগল ধরার প্রাইভেট কার আছে, বাংলাদেশে, জাতীয় জাদুঘরে। ছাগলশাস্ত্র কিংবা ছাগবিদ্যা এখনো মর্যাদাবান না হয়ে উঠলেও কিছু ছাগলতথ্য জেনে আমাদের সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে : এটা আমাদের জানা যে কারো কারো দাড়ি ছাগলের দাড়িসদৃশ হয়ে থাকে- বাংলায় একে যাই বলি না কেন ইংরেজিতে গোটিদের বেশ মর্যাদার সঙ্গেই বিবেচনা করা হয়। আমাদের চেনা বিশিষ্ট ‘গোটি’ হো চি মিন আর একালে জনি ডেপ। গোঁফ দিয়ে যায় চেনা- এটা যেমন সত্য, দাড়ি দিয়ে চেনার ব্যাপারটিও মিথ্যে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীকী আঙ্কল স্যাম ছাগানুরূপ দাড়ির অধিকারী, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজরেলিও তাই। থুতনির বাইরে আর দাড়ি গজাচ্ছে না সুতরাং গোটি। কিন্তু ফ্যাশনটা পছন্দ হয়ে গেছে বলে চাপদাড়িওয়ালাদেরও কেউ কেউ থুতনির দু’পাশ দাড়িশূন্য করে গোটি সেজে থাকতে পছন্দ করেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির উৎসাহ গোটি থেকে এসেছে কি না তাও গবেষণার বিষয়। ছাগলের বেলায় নরনারী নির্বিশেষে ‘গোটি বিয়ার্ড’ ধারণ করতে দেখা যায়, মানুষের বেলায় কেবল পুরুষই তা ধারণ করে।

রেন্ট-এ-গোট রেন্ট-এ-কার তো বাংলাদেশেই আছে, রেন্ট-এ-হাজব্যান্ড, রেন্ট-এ-ওয়াইফ বিদেশে চালু হয়েছে। কিন্তু রেন্ট-এ-গোট? এটাও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় চালু হয়ে গেছে। শতকের পর শতক ধরে অনাকাক্সিক্ষত ঘাস ও বৃক্ষরাজির বিনাশে ছাগল কাজে লাগানো হচ্ছে। ছাগলকে বলা হয় ‘ইটিং মেশিন’ এবং ‘বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্ট’। ১৯৯০ দশক থেকে এ কাজে ছাগলের গুরুত্ব বেশি বেড়ে গেছে। বুনো আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উত্তর আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে দাহ্য ঘাস পরিষ্কার করে আগুনের ঝুঁকি কমাবার জন্য ছাগলের বড় বড় পাল ছেড়ে দেয়া হয়। এই দায়িত্বটি পালন করে থাকে রেন্ট-এ-গোট কোম্পানি। মানুষের পক্ষে পরিষ্কার করা কঠিন এমন আগাছা এবং কাঁটাযুক্ত ব্ল্যাকবেরি লতা খেয়ে পরিষ্কার করে দেয় ভাড়াটে ছাগল। তবে এটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

স্কেইপগোট নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে ফেলে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চর্চাটি মানব সমাজে বিশেষ করে শিক্ষিত মানব সমাজে বহুল প্রচলিত। যিনি ফেঁসে যাবেন তিনিই স্কেইপগোট। স্কেইপগোট তো ছাগলকেই হতে হবে- আর তার উৎসটি হচ্ছে ধর্মগ্রন্থ বাইবেল। বহুবার ছাগল প্রসঙ্গ বাইবেলে এসেছে; সাতটি হিব্রু ও তিনটি গ্রিক শব্দেও ছাগলের কথা বাইবেলে উদ্ধৃত হয়েছে। ইহুদিদের খাদ্যবিধানে ছাগল হচ্ছে পরিচ্ছন্ন প্রাণী। অত্যন্ত সম্মানিত অতিথিকে ছাগল জবাই করে খাওয়ানো হয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বলিদানেও পবিত্র প্রাণী হিসেবে ছাগলই অগ্রাধিকার পায়। পাপ মুক্তির অনুষ্ঠানের দিন (ডে অব অ্যাটনমেন্ট) সহস্র ছাগল থেকে দুটিকে বাছাই করে আনা হয়। দুটির একটিকে বলি দেয়া হয় এবং সম্প্রদায়ের সব পাপ বহন করে একটিকে অরণ্যে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। পাপ বহনের বিষয়টি প্রতীকী এবং বিশ্বাসের অংশ। অন্যের পাপ বহনকারী এই ছাগলটিই হচ্ছে ‘স্কেইপগোট’। সমাজে ধূর্ত পাপী যেমন রয়েছে, তাদের পাপ বয়ে তাদের অবমুক্ত করে দেয়ার মতো নিরীহজনেরও কমতি নেই। নিউ টেস্টামেন্ট-এ (ম্যাথু ২৫) বর্ণিত : যিশুখ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ফিরে এলেন। ইহুদি মন্দির পরিদর্শনের পর শহরের বাইরে শিষ্যদের নিয়ে ‘মাউন্ট অব অলিভস’-এ আলোচনা করলেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে যিশু আলঙ্কারিক অর্থে এবং ছাগলের কথা বললেন। তিনি জানালেন একজন মেষ পালকের মতোই জাতিগুলোকে ভাগ করবেন তার ডান হাতে থাকবে মেষ অর্থাৎ যারা পুরস্কৃত হবে, অন্য হাতে থাকবে যারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। যদিও মেষ ও ছাগল একই ঘাস খায়, বিশেষ করে ওলের কারণে অর্থনীতিতে মেষের অবদান বেশি, মর্যাদাও বেশি। যদিও ছাগলের দুধ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুধ হিসেবে স্বীকৃত, যদিও ছাগলের মাংস অধিক আদৃত, যদিও ছাগলের চামড়া দিয়ে প্রথম ভিস্তিওয়ালার পানির পাত্র তৈরি হয়েছে, যদিও ছাগলে মানুষের বন্ধুত্ব হয়েছে ১০ হাজার বছর আগে, তবুও শাস্তি ছাগলেরই।

ছাগল চোরের মৃত্যুদণ্ড ২০২১-এর নভেম্বরে জামাইকার সেইন্ট ম্যারিতে ২৭ বছর বয়স্ক ডেনরয় হল এবং একই বয়সি জামার প্ল্যাঙ্কেটকে ডেপুটি সুপারিনটেডেন্ট অব পুলিশ ডিলান ক্লার্ক ছাগল চুরির অপরাধে গুলি করে হত্যা করেন। পুলিশের ভাষ্য, ট্রাফিক আইন অমান্য করে তাদের গাড়ি যখন চলে যাচ্ছিল তখন পুলিশ গুলি করে। গুলির জবাবে গাড়ির তিনজন পাল্টা গুলি চালায়। যখন গোলাগুলি থেমে আসে পুলিশ সেই গাড়ির কাছে যায় এবং দুটি মৃতদেহ দেখতে পায় আর তৃতীয় জন তাদের চোখের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা ঘটনাস্থলের কাছে গাড়ির পেছনে দুটি ছাগলও দেখতে পায় এবং ধরে নেয় এগুলো চুরি করা ছাগল। পুলিশের বর্ণনা খুব পরিচিত বর্ণনা মনে হয়, তাই তো? গোলাগুলির ঘটনা পুলিশের ভাষায়, প্রতিবেশীদের ভাষায় শুধু গুলির ঘটনা ঘটে- যদি নিহতদের হাতে মারণাস্ত্রই থাকবে তাহলে তারা ছাগল চুরি করতে যাবে কোন দুঃখে। প্রতিবেশীদের কাছে ছাগল চুরির কাহিনীটি বানোয়াট গল্পই মনে হয়েছে। অবশ্য চুয়াডাঙ্গার ব্যাপারটা ভিন্ন। গাড়িতে চড়ে চুরি করতে এলেও নিশ্চয়ই তারা মারণাস্ত্র বহন করেননি- নতুবা গাড়ি রেখে জনতার চোখে ধূলি দিয়ে পালাতে যাবেন কেন?

ছাগল দৌড়ের রাজধানী টোবাগো ঘোড়দৌড়ের মতোই ছাগল দৌড়। ছাগলের ওপর বাজিও ধরা যায়- বেশ জমজমাট জুয়া। ১৯২৫ থেকে ত্রিনিদাদ ও টোবাকোর রাজধানী টোবাগো শহরে ছাগল দৌড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিযোগিতা চলে। সে সময় প্রতিদিনই শহরে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছাগল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। ত্রিনিদাদের হাজার হাজার মানুষ ছাগল উৎসবে যোগ দেয়- এই সময়টা পর্যটনের সুসময়।

ছাগলে কি না খায়! পাগলে অনেক কিছুই বলতে পারে, পাগল না হয়েও ভারতীয় মন্ত্রী বলতে পারেন তার তৈরি রাস্তাটা হবে মাধুরী দীক্ষিতের চিবুকের মতো মসৃণ, সাক্ষাৎকারে আলগা কথা- লুজ টক টক করতে গিয়ে পাকিস্তানি মন্ত্রী মুশাহিদুল্লাহ খান চাকরি হারিয়েছেন। ছাগল পালনে বাংলাদেশে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। তবে ছাগলের খাওয়া নিয়ে সনাতন ধারণাটি ভীষণ ভুল- ছাগল খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত ‘চুজি’- হাজারটা খাবার মুখ দিতে পারে কিন্তু খায় কেবল পছন্দের খাবারটাই। অতঃপর চুয়াডাঙ্গার যে দুজন ছাগল চোর গাড়িটা রেখে গেল, এটা যখন অন্য চোরেরা শুনবে, এক কথায় বলে উঠবে : ছাগল নাকি? তারাপদ রায়ের কবিতাতেই আছে : মানুষের কী স্পর্ধা নিজেদের সন্তানকে শূকরছানা বলে গাল দেয়। শূকরছানার তুলনীয় হয়ে ওঠা এতো সোজা? কোনদিন ছাগল না আবার মানুষকে অপমান করে বসে : মানুষ যাচ্ছে তাই কথা বলে, যাচ্ছে তা-ই খায়। আমাদের সন্তানরা যেন মানুষের মতো না হয়। উইলিয়াম স্ট্যাফোর্ড ছাগলকে বই খেতে দেখেছেন এবং লিখেছেন, ‘ছাগল যখন কোনো বইয়ে মুখ দেয়, গোটা বইয়েরই বারোটা বেজে যায়। তার কথায় বই বিপণনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত। বাংলাদেশের সরকারি কবিদের কাব্যগ্রন্থ উইলিয়াম স্ট্যাফোর্ডের ছাগলদের জন্য সরবরাহ করার একটি প্রকল্প হাতে নিলেই তাদের বই বিপণন নিয়ে বাক-বিতণ্ডার অবসান ঘটত।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App