×

সারাদেশ

নিখোঁজ মা ও লাশের বয়স বিভ্রান্তি, ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৭ পিএম

নিখোঁজ মা ও লাশের বয়স বিভ্রান্তি, ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশটি খুলনার দৌলতপুর থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) বলে দাবি করেছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি করেন তিনি। তবে মরিয়মের মায়ের বয়স ৫২ বছর, আর উদ্ধার হওয়া লাশটির বয়স আনুমানিক ৩২ বছর বলে জানা গেছে। এতে রহস্য উদঘাটনে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে। এর আগে রহিমা বেগম গত ২৭ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হন। আর গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোপ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মরিয়ম মান্নান ‘মায়ের লাশ’ শনাক্তে ফুলপুর থানায় যান। সেখানে আলামত (কামিজ) দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বলেন, ‘এ লাশটি আমার মায়ের। তার সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যরাও তা-ই বলেছেন। এর আগে ঢাকা থেকে মরিয়ম, তার দুই বোনসহ পরিবারের ছয় সদস্য এলে পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের লাশের আলামত দেখান আলামত সংগ্রহে সহযোগিতাকারী ভ্যানচালক জামাল উদ্দিন। মরিয়ম মায়ের লম্বা চুলের বিবরণ শোনেন জামালের কাছ থেকে। তখন পরিবারের সবাই চিৎকার করে বলেন, এ লাশ আমাদের। তারা জানান, লাশের সঙ্গে থাকা ওই ওড়না ও সালোয়ার মা রহিমার পরনে ছিল না। বাকি আলামত রহিমার। তাদের ধারণা, হত্যাকারীরা আলামত নষ্ট করেছে যাতে পরিচয় শনাক্ত না করা যায়। ফুলপুর থানা সূত্র মতে, উদ্ধার হওয়া লাশের পোশাক ও আলামত সম্পর্কে মরিয়ম বৃহস্পতিবার রাতে ফুলপুর থানায় জানতে চান। পোশাক ও আলামতের কথা শুনে তিনি লাশটি তার মায়ের বলে দাবি করেন। তবে উদ্ধার হওয়া লাশের বয়স ৩২ বছর হবে। আর মরিয়মের মায়ের বয়স ৫২ বছর বলেছে স্বজনরা। তাছাড়া উদ্ধার করা লাশের পরনে গোলাপি রঙের সালোয়ার এবং সুতি ছাপা গোলাপি, কালো, বেগুনি ও কমলা রঙের কামিজ ছিল। গলায় পেঁচানো ছিল গোলাপি ওড়না। পরে মরিয়ম ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছেন। মরিয়ম মান্নান জানান, তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। তারা ছয় ভাই-বোন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এইমাত্র।’ পরে রাত ১২টার পর ফেসবুকে আরেক পোস্টে মরিয়ম লেখেন, ‘আর কারো কাছে আমি যাব না! কাউকে আর বলব না, আমার মা কোথায়! আমাকে একটু সহযোগিতা করুন! আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন! কাউকে আর বিরক্ত করব না! আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি!’ এ ব্যাপারে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তারা গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে বওলা গ্রামের একটি কবরস্থানের ঝোপ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। লাশটি গলিত থাকায় এটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর লাশটি ফুলপুরের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘মরিয়মসহ কয়েকজন এসে আলামত দেখে লাশটি তার মায়ের বলে দাবি করছেন। এটি নিশ্চিত হতে আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। রবিবার আদালতে বিষয়টি তোলা হবে।’ প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এক ঘণ্টা পরও তিনি ঘরে না ফেরায় সন্তানরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। নলকূপের পাশে মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়েছিল। এ ঘটনায় রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন তার মেয়ে আদুরী আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে খুলনা ও ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন সন্তানরা। মেয়ে মরিয়মের আকুতি ও কান্নার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। তবে স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে বরাবরই এই নিখোঁজের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ ছিল। নিখোঁজ নারীর স্বজনরা বলেছে, পুলিশ তদন্তের পরিবর্তে তাদের মা ও তাদের সম্পর্কে কুৎসিত অভিযোগ প্রচার করেছে। তাদের দাবি, তাদের সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। একাধিক ব্যক্তি সম্পত্তি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। তাদের মধ্যেই এক বা একাধিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। আর তাদের সঙ্গেই পুলিশ যোগসাজশে কুৎসিত প্রচারণা চালায় বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App