×

জাতীয়

৮ বছর আত্মগোপনে থেকেও ধরা খুনের আসামি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২৫ পিএম

৮ বছর আত্মগোপনে থেকেও ধরা খুনের আসামি

র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তার হওয়া হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেন তারেক (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

নাম ও পরিচয় বদলিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে অসংখ্যবার পেশা বদল করেও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেন ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রানা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি ইকবাল হোসেন তারেক (৩৮)।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সে পলাতক ছিল।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ইকবাল তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামে একটি ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিল কামরুল ইসলাম ও তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সঙ্গে নিহত মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। বিরোধ নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ডিসের ক্যাবল কেটে দিতো। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। এ ঘটনার জেরে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাহবুবুর রহমান রানাকে হত্যা করা হয়। ওই দিন মোটরসাইকেলে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন রানা। মগবাজার চৌরাস্তা মসজিদের পাশের গলিতে ঢুকলে বাটার গলির মুখে ইকবালসহ অন্যান্যরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে রানার মুখে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় স্থানীয় লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে ইকবালরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি ছোঁড়ে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রানাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। মামলার পরই আসামি আত্মগোপনে চলে যায়। ওই মামলার ঘটনায় সুইফ ক্যাবল লিমিটেডের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার এবং চার জন পলাতক ছিল। পলাতক আসামিদের মধ্যে একজন ছিল ইকবাল হোসেন তারেক। তার নামে ২০২০ সালে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের পর আসামি ইকবাল হোসেন তারেকের পলাতক জীবন শুরু হয়। তার নিজ বাড়ি চাঁদপুর। কিন্তু সে বেড়ে ওঠে যশোরে। ফলে চাঁদপুরের লোকজন তেমন চিনতো না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হত্যাকাণ্ডের পর সে চাঁদপুর পালিয়ে যায়। নিজেকে তাহের হিসেবে পরিচয় দিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে। সেখানে সে চাষাবাদ করতো। কিন্তু চাষাবাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় পুনরায় সে যশোরে ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে কিছুদিন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তারপর মাদক ব্যবসা শুরু করে। ২০১৯ সালে আবারও ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে তাহের, পিতা-আব্দুর রহিম পরিচয় দিয়ে বসবাস শুরু করে এবং গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টুন সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এই ব্যবসার আড়ালে সে মাদক ব্যবসা করতো এবং ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করতো। সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসায়িদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর র‌্যাবের গোয়েন্দা দল তাকে গ্রেফতার করে।

র‌্যাব জানায়, ঘটনার পরই আত্মগোপনে চলে যান ইকবাল। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে গিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। এই কাজ ভালো না লাগায় তিনি যশোরে গিয়ে কিছুদিন পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

তারপর তিনি মাদক ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায় এসে বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টন সংগ্রহ করে বিক্রি করছিলেন। ঢাকায়ও তিনি মাদক ব্যবসা শুরু করেন। মাদকসহ তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হন। এ সময় নিজেকে তাহের পরিচয় দেন।

তাই একাধিকবার গ্রপ্তার হলেও হত্যা মামলার বিষয়টি গোপন করতে সক্ষম হন। তার নামে হত্যা, মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে। র‌্যাব-৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে ইকবাল হোসেন ঘন ঘন তার বাসস্থান পরিবর্তন করতেন।

সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর র‌্যাবের গোয়েন্দা দলের জালে তিনি ধরা পড়েন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App