×

মুক্তচিন্তা

আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নারীবান্ধব হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪১ এএম

দুর্যোগপ্রবণ জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার অন্যতম জনবহুল ইউনিয়ন গাবুরা। দ্বীপ এই ইউনিয়নের উত্তর-দক্ষিণে কপোতাক্ষ নদ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে খেলপেটুয়া নদীর অবস্থান, যা যে কোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে এই ইউনিয়নকে করেছে ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় নানা দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। মাঝে মাঝে তাদের সপরিবারে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে হয়। দুর্যোগকালীন ভুক্তভোগীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছেন স্থানীয় নারীরা। নারীদের ভোগান্তির এই কারণ শুধুই যে দুর্যোগ তা নয়, বরং দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সুযোগ-সুবিধার অপর্যাপ্ততাও একটি প্রধান কারণ। ৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১২টি, যা তাদের জনসংখ্যা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিতান্তই অপ্রতুল। তাই দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রিত বাসিন্দাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সাহায্য নিশ্চিত করাটা কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় প্রায় সব নারীরই কম-বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটি দুর্যোগের সময় যখন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যান, তাদের প্রথম যে সমস্যাটির মুখোমুখি হতে হয় সেটি হলো তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ। প্রাথমিকভাবে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হলেও একটা পর্যায়ে যখন জায়গার সংকুলান হয় না তখন নারী ও পুরুষ উভয়কেই একই কক্ষে গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হয়। এতে আশ্রিত নারীদের নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। ত্রাণ গ্রহণের সময় এই বিড়ম্বনা আরো চরমে পৌঁছায়। আবার মাঝেমধ্যে তাদের যে ত্রাণ দেয়া হয় সেটির মান নিয়েও তাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব কাজ করে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকালে তাদের যে পরিমাণ বিশুদ্ধ খাবার পানির জোগান দেয়া হয় সেটিও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে না। টয়লেটগুলোর অবস্থাও বেশ নাজুক। অপরিচ্ছন্ন, পিচ্ছিল মেঝে, পর্যাপ্ত পানি ও হাত ধোয়ার সাবানের অনুপস্থিতি টয়লেটগুলোকে অকার্যকর করে রেখেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভোগান্তির চরম রূপের সম্মুখীন হওয়া একটা উল্লখযোগ্য অংশ হচ্ছেন স্থানীয় কিশোরীরা। একইসঙ্গে থাকতে হয় তাই অনেক সময় স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা কিশোরীরা আশ্রয়কেন্দ্রেই নানাবিধ যৌন নিপীড়নের শিকার হন। কিন্তু সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে এই অভিযোগগুলো আড়ালেই রাখতে হয় তাদের। অন্যদিকে গর্ভবতী নারীদের জন্য দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা সেখানে থাকে না। এটি সত্যিই দুঃখজনক যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যখন পুরো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে অঞ্চলটিতে এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি হেলথ কমপ্লেক্স শুধু নামে মাত্রই রয়েছে, কিন্তু কার্যত অর্থে সবই অন্তঃসারশূন্য। আর এরূপ প্রেক্ষাপটে আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাটা নিছকই যেন এক আকাশ কুসুম কল্পনা। অন্যদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে দিনের বেলায় কোনোরকমভাবে কাটিয়ে দেয়া গেলেও রাতে যেন ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ যখন বন্ধ থাকে তখন রাতে মোমবাতি কিংবা টর্চলাইট আর হাত পাখার ব্যবহারই আশ্রিত বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা। এর ফলে অতিরিক্ত গরমে প্রায়ই মা ও শিশুদের নানা শারীরিক রোগবালাইয়ের সম্মুখীন করতে হয়। একে তো দুর্যোগ, তার ওপর আবার এসব অব্যবস্থাপনা। সব মিলিয়ে আশ্রিত নারীদের জন্য এ যেন এক মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এতে করে সেখানকার নারীরা সর্বদাই এক ঝুঁকির মধ্যেই রয়ে যাচ্ছেন। দুর্যোগকালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা নিয়েই সবাই এখানে অবস্থান করতে আসেন, নারীরাও এর বাইরে নয়। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা ও সাহায্য নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করতে হবে। তাদের সব চাহিদা ও সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে। তা না হলে, অদূর ভবিষ্যতে স্থানীয় নারীরা ও তাদের পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারাবেন। এতে করে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে বড় একটা জনগোষ্ঠীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই গাবুরা ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে নারীবান্ধব করার কোনো বিকল্প নেই।

শাখাওয়াত হোসেন শাহ্ : শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App